শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২

১৩০০ কোটি বছরের ছবি যেভাবে দেখা গেলো জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে

 

প্রতি সেকেন্ডে আলোর গতিবেগ ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল। সেই হিসাবে বর্তমান নক্ষত্রের যে আলো আমরা দেখি, তা কিন্তু আজকের নয়। তা আসলে ১৩০০ কোটি বছরেরও বেশি পুরোনো। যা এতদিনে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। টেলিস্কোপে পৌঁছানোর আগে কয়েকশ কোটি বছর ধরে ভ্রমণ করেছে এ আলো। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ যে ছায়াপথের ছবি তুলেছে, তা ৪৬০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। সেই হিসাবে যে ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছে তা ১৩০০ কোটি বছর আগেকার।




বিজ্ঞানীদের মতে, মহাজগতের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর। বিজ্ঞানীদের সুবিধা হওয়ার আরও বড় কারণ হলো, উন্নত টেলিস্কোপ হওয়ায় জেমস ওয়েব উজ্জ্বল আর স্পষ্ট ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছে।

নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, ‘আমরা ১ হাজার ৩০০ কোটি বছরেরও বেশি পেছনের দিকে তাকাচ্ছি।’ তিনি আশাপ্রকাশ করে আরো বলেন, ‘নাসা শিগগিরই আরও ছবি প্রকাশ করবে। সেগুলো প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি বছর আগেকার। এসব ছবি মহাবিশ্বের আনুমানিক শুরুর বিন্দুর কাছাকাছি। অর্থাৎ আমরা প্রায় শুরুতে ফিরে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞানীরা ওয়েব টেলিস্কোপের তথ্যের গুণগত মান বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারছেন যে, এই ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে এই টেলিস্কোপ তার থেকেও অনেক গভীরে গিয়ে মহাজগতের চিত্র তুলে আনতে সক্ষম। এর ফলে, অতি শক্তিশালী এই দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মহাশূন্যের অনেক ভেতর পর্যন্ত এখন দেখা এবং তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞানীদের আশা পৃথিবীর মতো যেসব গ্রহের বাতাসে গ্যাস রয়েছে, একদিন হয়তো ওয়েব টেলিস্কোপ সেসব গ্রহের ওপর নজরদারি করতে সক্ষম হবে। সেটা হলে ওই সব গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে একটা ধারণা পাবার যথেষ্ট সম্ভাবনা তৈরি হবে।

বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২

১৩০০ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বের রঙিন ছবি দিল নাসা

 


প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের আলোর সন্ধান পেল নাসার টেলিস্কোপ। সেই ছবি হোয়াইট হাউসে দাঁড়িয়ে প্রকাশ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনছবি: রয়টার্স


১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগে মহাবিশ্বের এক রঙিন ছবি দিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তোলা গ্যালাক্সিগুলোর এমন ছবি এই প্রথম প্রকাশ করা হলো।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে সেই ছবি প্রকাশ করে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবদানের কথা তুলে ধরেন। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ানের।

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে এই ছবি ধারণ করা হয়। ছবিটি মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলোর একটি অংশকে ধারণ করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে এসএমএসিএস ০৭২৩।

ছবিতে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা জ্বলজ্বলে আলোক রশ্মির বিচ্ছুরণ ফুটে উঠেছে। মহাবিশ্বের প্রাচীনতম রূপ এটি। মহাবিশ্বের এই ছবি নিয়ে হইচই পড়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে। ছবি উন্মোচন করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, নাসা অভূতপূর্ব কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও গোটা মানবসভ্যতার জন্য এটি ঐতিহাসিক দিন।

নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেছেন, ছবিটিতে বিভিন্ন গ্যালাক্সির চারপাশে বাঁকানো গ্যালাক্সির আলো ফুটে উঠেছে। টেলিস্কোপে পৌঁছানোর আগে কয়েক শ কোটি বছর ধরে ভ্রমণ করেছে এ আলো।

বিল নেলসন আরও বলেন, ‘আমরা ১ হাজার ৩০০ কোটি বছরেরও বেশি পেছনের দিকে তাকাচ্ছি।’ তিনি বলেন, নাসা শিগগিরই আরও ছবি প্রকাশ করবে। সেগুলো প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি বছর আগেকার। এসব ছবি মহাবিশ্বের আনুমানিক শুরু বিন্দুর কাছাকাছি। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় শুরুতে ফিরে যাচ্ছি।’

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নাসার নতুন এই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ আগের হাবল টেলিস্কোপ থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। এটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে এক হাজার কোটি ডলার। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটি মহাশূন্যের উদ্দেশে রওনা দেয়। পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই টেলিস্কোপ। টেলিস্কোপের মূল লক্ষ্য দুটি। এক, প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বে জ্বলে ওঠা আদি নক্ষত্রগুলোর ছবি তোলা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে দূরদূরান্তের গ্রহগুলো প্রাণ ধারণের উপযোগী কি না, তা খতিয়ে দেখা।

ছবিটি উদ্বোধনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘এসব ছবি সারা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায় যে যুক্তরাষ্ট্র বড় বড় কাজ করতে পারে। আর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, বিশেষ করে শিশুদের মনে করিয়ে দিতে চায়, কোনো কিছুই আমাদের জন্য দুরূহ নয়।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘তিন যুগ ধরে নির্মিত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটি নতুন নতুন ছবিটি দিয়ে মহাবিশ্বে সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে পাল্টে দিতে পারে।’

শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২

আলো, আলোর গতিবেগ ও আলোকবর্ষ

আলো, আলোর গতিবেগ ও আলোকবর্ষ


আলো এক ধরনের শক্তি, তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গআলো যা বস্তুকে দৃশ্যমান করে, কিন্তু এটি নিজে অদৃশ্য। আমরা আলোকে দেখতে পাই না, কিন্তু আলোকিত বস্তুকে দেখি। মাধ্যমভেদে আলোর বেগের পরিবর্তন হয়ে থাকে। আলোর বেগ মাধ্যমের ঘনত্বের ব্যস্তানুপাতিক। শুন্য মাধ্যমে আলোর বেগ সবচেয়ে বেশি, আলোর বেগ অসীম নয়। শূন্যস্থানে আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে ২৯,৯৭,৯২,৪৫৪ মিটার বা ১,৮৬,০০০ মাইল। কোন ভাবেই আলোর গতিকে স্পর্শ করা সম্ভব নয়। আলোর কোনো আপেক্ষিক বেগ নেই । আলোর বেগ সর্বদা সমান।

আলোকবর্ষ 

শূন্য মাধ্যমে আলোর এক বছর সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলে।


অর্থাৎ 1 আলোকবর্ষ মান = 300000×365×24×60×60 কিলোমিটার

= 9.46×1012 কিলোমিটার প্রায়।

জ্যোতির্বিদ্যায় কোটি কোটি মাইল দূরত্বে হিসাব করা হয়। এই বিরাট দূরত্ব মাপার জন্য একক হিসাবে আলোকবর্ষ ব্যবহৃত হয়। শূন্য মাধ্যমে আলোর এক বছর সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলা হয়।

আলোকবর্ষের মান

এক আলোকবর্ষ = 186000×60×60×24×365 মাইল

= 5.86×1012 মাইল প্রায়

= 9.46×1012 কিলোমিটার।

পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র আলফা সেন্টাউরি থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে প্রায় 4.4 বছর সময় লাগে। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে ওই নক্ষত্রটির দূরত্ব প্রায় 4.4 আলোকবর্ষ। এছাড়া আকাশে এমন সব নক্ষত্র রয়েছে পৃথিবী থেকে তাদের দূরত্ব বহু কোটি আলোকবর্ষ।

আলোর গতিবেগ এত তীব্র হওয়া সত্ত্বেও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে আলোরও কিছু সময় লাগে। তবে আলোর গতিবেগ এত তীব্র যে, আমাদের জানা কোন গতিবেগের সঙ্গে এর তুলনা করা যায় না। আলোর তীব্র গতিবেগের জন্য মনে হয় যে, আলোর গতিতে কোন সময় লাগে না। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব 15 কোটি কিলোমিটার। কিন্তু এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে আলোর সময় লাগে 8.3 মিনিট মাত্র। অর্থাৎ 1 সেকেন্ডে আলো পৃথিবীকে 7 বার ঘুরে আসতে পারে।