শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

আলোর গতি ও সময় ভ্রমণ

 এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার হলো সময় ভ্রমণ বা আলোর গতিতে চলা।  আলোর গতি ই তো সবচেয়ে দ্রুততর, তাইনা? তিন লক্ষ কিঃমিঃ পার সেকন্ড। এতো দ্রুতবেগে চলতে পারে এমন কোনো বস্ত এখনো আবিস্কার হয়নি। এতো দ্রুততম চলার মতো কোনো রকেট/স্পেসশিপ/যানবাহন তথ্য ও প্রযুক্তির এত উন্নতশীল যুগে বিজ্ঞান আবিস্কার করতে পারেনি। তবে ভবিষ্যৎকালে এমন কিছু আবিস্কার হবে কি না। তার সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি। হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। কারণ ভরযুক্ত কোনো বস্ত এত দ্রুত চলতে অক্ষম।

 আমরা জানি, মহাবিশ্বে আলোর বেগ সবচেয়ে বেশি। আর কোনো বস্তুতে আলো এসে পরলে আমরা সেই বস্তুটিকে দেখতে পাই। এক্ষেত্রে বলা যায়,সূর্যের আলো এসে যখন কোনো বস্তুতে পড়বে এরপর আমরা বস্তুটিকে দেখতে পাই। এর আগে কখনোই দেখা সম্ভব নয়।

 সূর্য আমাদের থেকে ৮.১৯ মিনিটস দূরে অবস্থান করছে। সূর্যের আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে তারপরই আমরা তাকে দেখতে পাই। আমরা সবসময় ৮.১৯ মিনিটস আগের সূর্যকে দেখি। আমরা জানি, শূন্য মাধ্যমে আলোর গতি 300,000 কিঃমিঃ পার সেকেন্ড। সে হিসেবে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব 149,700,000 কোটি কিঃমিঃ বা প্রায় 15 কোটি কিঃমিঃ। মাত্র ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে আলোর গতি 15 কোটি কিঃমিঃ।


  তাহলে, এক বছরে আলোর দূরত্ব কতো? 364*24*3600 সেকেন্ড আলো যতটুকু পথ অতিক্রম করবে।

=365*24*3600*3*10^8 মি

=9.460*10^15 মি

  অর্থাৎ ১ আলোকবর্ষ সমান 9.5 ট্রিলিয়ন কিঃমিঃ বা 5.9 ট্রিলিয়ন মাইল। অতএব বুঝতেই পারছেন, এক বছরে আলোর দূরত্ব কিলোমিটারে প্রকাশ করলে কতো হবে।


আমরা সবাই জানি, সূর্যের পর পৃথিবী থেকে একেবারে কাছের যে নক্ষত্র আল্ফা সেন্টাউরি সেটার দূরত্ব হচ্ছে ৪.২৪ আলোকবর্ষ। তাহলে দেখুন, দূরত্বটা কত বেশি। নিকটতম নক্ষত্রের হিসেব করতে ও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।আবার আমরা যখন রাতের আকাশের মিটমিট করতে থাকা তারাগুলো দেখি। ওগুলো থেকে আলো আসতে শুধু মিনিট নয় কয়েক হাজার বছরও লেগে যেতে পারে।

   আমরা যে গ্যালাক্সিতে বাস করছি সেটা হচ্ছে মিলকিওয়ে গ্যালাক্সি, বাংলায় যাকে বলি আকাশগঙ্গা ছায়াপথ। এই গ্যালাক্সির ব্যাস ১০০,০০০ আলোকবর্ষ এই গ্যালাক্সিতে রয়েছে সূর্য ও তার আটটি গ্রহ, ২০৫ টি প্রাকৃতিক উপগ্রহ, ৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র। 

আমাদের নিকতটম গ্যালাক্সি হচ্ছে এনড্রোমিডা গ্যালাক্সি। যার ব্যস ২২০,০০০ আলোকবর্ষ, যা আমাদের গ্যালাক্সির দ্বিগুণ। আর দূরত্ব ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। এই গ্যালাক্সিতে ১ ট্রিলিয়ন বা এক লক্ষকোটি নক্ষত্র রয়েছে।

 আবার দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সি হল বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের IC 1101. এখানে নক্ষত্রের সংখ্যা ১০০ ট্রিলিয়ন। পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে এরকম ২০ ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে। 😮😮😮

 ১৩.৮ বিলিয়ন বছরের এই মহাবিশ্ব আলোর চেয়ে দ্রুতি নিয়ে বিস্তৃত করেছে ৪৬.৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষের সুবিশাল এক ব্যাসার্ধ। অর্থাৎ দৃশ্যমান মহাবিশ্ব ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষের বিশাল এক গোলক।

এই দৃশ্যমান মহাবিশ্বের প্রান্তসীমা ১৩০০ কোটি আলোকবর্ষ নয় বরং ৪৬০০ কোটি আলোকবর্ষ। এটা কিভাবে সম্ভব? আলোর গতির দ্বিগুণ গতিতে সম্প্রসারণ হচ্ছে মহাবিশ্ব। কারণ বিজ্ঞানীরা ১৩০০ কোটি বছর আগের যে সমস্ত গ্যালাক্সি গুলো দেখেছেন, সেগুলো আলোর দ্বিগুণ গতিতে সম্প্রসারণ হয়ে দ্রুতগতিতে দূরে সরে যাচ্ছে। যার ফলে গ্যালাক্সি গুলোর মধ্যকার বিস্তর দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়ে মহাবিশ্বের দেয়ালটা ৪৬০০ কোটি আলোকবর্ষের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই পাশ হিসেব করলে মহাবিশ্বের ব্যাস গিয়ে দাড়ায় ৯৩০০ কোটি আলোকবর্ষে। অর্থাৎ দৃশ্যমান মহাবিশ্বের ব্যস প্রায় ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ।

এ তো গেলো দৃশ্যমান মহাবিশ্বের হিসেব। প্রকৃত মহাবিশ্ব কত বড় হতে পারে তা অনুমানের বাইরে। দৃশ্যমান মহাবিশ্ব প্রকৃত মহাবিশ্বের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র। সে হিসেবে তো প্রতিটি বড় বড় গ্যালাক্সি যেখানে বিলিয়ন বিলিয়ন ইয়া বড় বড় তারকা থাকে সে গ্যালাক্সি গুলো একটি ছোট্ট বিন্দুসম মাত্র। এখন প্রশ্ন হলো এত কম সময়ে মহাবিশ্ব এত বিশালাকৃতি পেলো কিভাবে?

ভাবার বিষয়, মাত্র ১৩ বিলিয়ন বছরে ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ ব্যস। এটা কিভাবে সম্ভবপর? বিগ ব্যাং তত্ত্ব থেকে এর সঠিক জবাব আমরা পাইনা। বিগ ব্যাং তত্ত্ব এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেনা। আমরা ইনফ্লেশন থিওরি তে যাবো। ইনফ্লেশন থিওরি এর জবাব দিতে পারবে। কেননা শুরুতে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ গতি বেড়ে গিয়েছিল সূচকীয় হারে। আলোর থেকে দ্বিগুণ গতিতে সম্প্রসারিত হতে থাকে মহাবিশ্ব। গ্যালাক্সি গুলো খুব দ্রুতগতিতে একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সূচকীয় হারে বেড়ে চলে সম্প্রসারণের গতি। কোনো কিছু সূচকীয় হারে বাড়তে থাকলে তার নমুনা ভবিষ্যতে কিরূপ ভয়ংকর হতে পারে তা কল্পনাতীত।

 

এখানে আইনস্টাইনের Special Relativity তত্ত্ব বুঝতে আমরা ভুল করি। Special Relativity তত্ত্ব অনুযায়ী কোনো বস্তু স্পেস-টাইমের ভেতর দিয়ে আলোর বেগের থেকে বেশি গতিতে যেতে পারে না।


Special Relativity তত্ত্বের মাধ্যমে আইনস্টাইন স্পেস-টাইমের ভেতর দিয়ে বস্তুর গতির লিমিট নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।

কিন্তু স্বয়ং স্পেস-টাইম?

এর ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো লিমিট নির্দিষ্ট করা হয়নি।

অর্থাৎ স্পেস-টাইম নিজে আলোর গতির থেকে বেশি গতি প্রাপ্ত হতে পারে।


সুতরাং স্পেস-টাইমের গতি ফিজিক্সের কোনো নীতি ভঙ্গ করছে না।

মহাবিস্ফোরণ পরবর্তী সময় থেকে মহাবিশ্ব কতটুকু বেগে সম্প্রসারণ হচ্ছিল? আমরা জানি যে, মহাবিশ্বের বর্তমান বয়স প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর।  আর ব্যস হলো ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। মাত্র ১৩.৮ বিলিয়ন বছরে ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ ব্যাপ্তী বিস্তৃত হয়েছে। তাহলে কি ধরে নেব আলোর চেয়ে খুব দ্রুত বেগে মহাবিশ্ব এক্সপ্যান্ড হচ্ছে? যেখানে আমরা জানি, কোনো কিছুই আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে চলতে পারেনা।


হুম! আলবার্ট আইনস্টাইন সঠিক। মহাবিশ্ব আলোর চেয়ে দ্রুততর সম্প্রসারণ হচ্ছে এটাও সঠিক। স্পেসটাইম বা স্থানকালের মধ্যে দিয়েই একমাত্র সম্ভব হয়েছে আলোর চেয়ে দ্রুতবেগে সম্প্রসারণ হওয়া। 


 দ্রুতবেগে সম্প্রসারণের ফলে মহাবিশ্বের সবকিছু একে অন্য থেকে দূরত্বে চলে যাচ্ছে। গ্যালাক্সি গুলোর মধ্যকার পারস্পরিক দূরত্ব বেড়ে চলেছে। গ্যালাক্সি গুলো একে অন্য থেকে দুরে চলে যাচ্ছে এ কথা ভুল। বরং গ্যালাক্সির মধ্যকার স্পেস দুরে চলে যাচ্ছে।

  একটি কিশমিশ মিশ্রিত কেকের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন। কেক গুলো তৈরি করে কিশমিশ গুলো এক সেঃমিঃ পরপর স্থাপন করা হয়েছে। এবার আপনি যখন এটিকে ওভেনে গরম করতে দিবেন, এক ঘণ্টা পর বের করলে দেখবেন কিশমিশ গুলোর দূরত্ব প্রায় তিন সেঃমিঃ হয়ে গেছে। কিভাবে? কিশমিশ গুলো কি তাহলে দুরে সরে গিয়েছে? না, আসলে কিশমিশের মধ্যকার ফাকা জায়গা বা স্পেস দুরে সরে গিয়েছে, মুলতঃ কিশমিশ সরে যায়নি। অর্থাৎ গ্যালাক্সি গুলোর মধ্যকার স্পেস এক্সপ্যান্ড হচ্ছে।

চলবে.....

--- আমার ডায়েরি থেকে

সোমবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২০

১৪ বিলিয়নে ৯৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ

১৪ বিলিয়নে ৯৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ!

দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সমাধান।


আমাদের মহাবিশ্বের বয়স ১৪ বিলিয়ন বছর। কিন্তু পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ব্যাস ৯৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। আমরা জানি, কোনো কিছুই আলোর গতির থেকে বেশি গতিতে যেতে পারে না। তাহলে সে হিসেব অনুসারে পর্যবেক্ষণযোগ্যমহাবিশ্বের ব্যাস ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ হওয়ার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা ৯৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ! তাহলে মহাবিশ্ব কি আলোর গতির থেকে বেশি গতিতে এগিয়েছিলো? কিন্তু তা কী করে সম্ভব?

এটা বোঝার আগে আমরা দুটো বিষয়ের ওপর পরিষ্কার ধারণা নিয়ে নেবো।

  1. ডপলার শিফট
  2. ডপলার এফেক্ট
আমরা অনেকেই জানি তবুও একটা টাচ দিচ্ছি। আপনি স্থির দাঁড়িয়ে আছেন, দূর থেকে একটি মোটরবাইক হর্ন বাজিয়ে আপনার দিকে আসছে। বাইকটি আপনার যত নিকটবর্তী হচ্ছে হর্নের শব্দও তত জোরালো শোনাচ্ছে। বাইকটি আপনাকে অতিক্রম করে গেলো। বাইকটি আপনার কাছ থেকে যত দূরবর্তী হচ্ছে হর্নের শব্দও তত ক্ষীণ শোনাচ্ছে।

ওপরের ঘটনাটি আমরা সবাই প্রত্যক্ষ করেছি। এই ঘটনা থেকে আমরা দুটো সিদ্ধান্তে আসতে পারি-
  • উৎস (বাইক) থেকে উৎপন্ন শব্দ আপনার যত নিকটবর্তী হতে থাকবে শ্রুত শব্দ তত তীব্র হবে।
  • উৎস (বাইক) থেকে উৎপন্ন শব্দ আপনার যত দূরবর্তী হতে থাকবে শ্রুত শব্দ তত ক্ষীণ হবে।

ধন্যবাদ, এটিই ডপলার এফেক্ট। এখন প্রশ্ন হতে পারে কেনো এমনটি হয়। আমরা পুকুরে ঢিল মেরে ঢেউ (তরঙ্গ) সৃষ্টি করেছি। ঢিলটা পুকুরের যেখানে পড়ে ঠিক সেখান থেকেই ঢেউয়ের প্রবাহ পুকুরের চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। উৎপত্তিস্থল থেকে যত দূরে যেতে থাকে ঢেউটি ততই দূর্বল হতে থাকে এবং এক সময় এটি জলের সাথে মিলিয়ে যায়।

আমরা জানি শব্দও তরঙ্গ রূপে প্রবাহিত হয়।উৎপত্তিস্থল থেকে যত দূরে প্রবাহিত হতে থাকে শব্দের তীব্রতা ততই ক্ষীণ হতে থাকে এবং এক সময় মাধ্যমে (সাধারণত বায়ু মাধ্যমে) বিলীন হয়ে যায় (ঢেউয়ের মতো)।

মজার ব্যাপার হলো আলোর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। আর আলোও তো তরঙ্গ, তাই এর ক্ষেত্রেও ডপলার এফেক্ট দেখা যায়। কিন্তু আলোর ক্ষেত্রে ডপলার এফেক্ট কিরকম?
আমরা জানি লাল আলোর শক্তি সবথেকে কম এবং নীল (আসলে বেগুনী। কিন্তু আমাদের চোখ নীল আলোর প্রতি অধিকতর সংবেদনশীল) আলোর শক্তি সবথেকে বেশি।

উৎস (যে বস্তু থেকে আলো আসছে) থেকে আলো স্থির পর্যবেক্ষকের নিকটবর্তী হতে থাকলে সেটি নীল (ব্লু শিফট) এবং দূরবর্তী হতে থাকলে লাল (রেড শিফট) দেখাবে। আলোর ক্ষেত্রে ডপলার এফেক্টকে ডপলার শিফট বলে। যেমন- অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি মিল্কি ওয়ের নিকটবর্তী হচ্ছে। ফলে এর থেকে আসা আলো ব্লু শিফট প্রদর্শন করে।

১৯২০ সালে সর্বপ্রথম এডুউইন হাবল দুটো জিনিস আবিষ্কার করেন-
  1. লোকাল গ্রুপের বাইরে অবস্থিত প্রতিটি গ্যালাক্সি আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
  1. লোকাল গ্রুপ থেকে একটি গ্যালাক্সির দূরত্ব যত বেশি সেটি (নিকটবর্তী গ্যালাক্সিগুলোর সাপেক্ষে) তত দ্রুত বেগে সরে যাচ্ছে।

২ নম্বর ব্যাপারটি যদি আমরা বুঝতে পারি তাহলেই আমাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান হবে। তবে একে বোঝার জন্য আমাদের একটি চিত্রসহ ব্যাখ্যার দরকার পড়বে।

মনে করুন আপনি একটি কিশমিশ কেক বানালেন।প্রতিটিকিশমিশের মধ্যবর্তী দূরত্ব ১ সেমি। আপনি এবার কেকটি বেক করার জন্য ওভেনে রাখলেন। ঠিক এক ঘণ্টা পর আপনি কেকটি বের করে আনলেন। কেকটি প্রসারিত হওয়ায় কিশমিশ গুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব এখন ৩ সেমি হয়ে গিয়েছে। এবার আমাদের হিসেব করার পালা।

চিত্রে দেখানো আছে। আমরা একটি কিশমিশ বেছে নিলাম এবং একে নাম দিলাম Local Raisin। লক্ষ্য করে দেখুন যে বেক করার আগে Local Raisin থেকে 1 নং কিশমিশের দূরত্ব ছিলো ১ সেমি। এক ঘণ্টা বেক করার পর এ দূরত্ব গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ সেমি। অর্থাৎ Local Raisin থেকে 1 নং কিশমিশটি এক ঘণ্টায় ২ সেমি সরে গিয়েছে। সুতরাং, Local Raisin'র সাপেক্ষে 1 নং কিশমিশটির গতি ২ সেমি/ঘণ্টা।

আবার বেক করার আগে Local Raisin থেকে 2 নং কিশমিশের দূরত্ব ছিলো ২ সেমি এবং এক ঘণ্টা বেক করার পর এ দূরত্ব গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬ সেমি। অর্থাৎ Local Raisin থেকে 2 নং কিশমিশটি এক ঘণ্টায় ৪ সেমি সরে গিয়েছে। সুতরাং, Local Raisin'র সাপেক্ষে 2 নং কিশমিশটির গতি
৪ সেমি/ঘণ্টা।

একইভাবে, বেক করার আগে Local Raisin থেকে 3 নং কিশমিশের দূরত্ব ছিলো ৩ সেমি এবং এক ঘণ্টা বেক করার পর এ দূরত্ব গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯ সেমি। অর্থাৎ Local Raisin থেকে 3 নং কিশমিশটি এক ঘণ্টায় ৬ সেমি সরে গিয়েছে। সুতরাং, Local Raisin'র সাপেক্ষে 3 নং কিশমিশটির গতি
৬ সেমি/ঘণ্টা।

এই প্রদর্শন থেকে আমরা বুঝতে পারি যে Local Raisin থেকে একটি কিশমিশের দূরত্ব যত বেশি হবে সেটি তত দ্রুত গতিতে সরে যেতে থাকবে। কিন্তু এখানেই একটি ক্যাচ। আচ্ছা কিশমিশগুলো একে অপরের থেকে সরে যাচ্ছে না এদের মধ্যবর্তী স্পেস (কেক) প্রসারিত হচ্ছে?

নিশ্চই এদের মধ্যবর্তী স্পেস প্রসারিত হয়েছে। বেক করার আগে কেকটি ছোটো ছিলো এবং কিশমিশ গুলো পরস্পর সন্নিকটে ছিলো। বেক করার ফলে কেকটি বড় হয়, ফলে কিশমিশ গুলোর মধ্যবর্তী স্থান প্রসারিত হয়ে এগুলোকে দূরে ঠেলে দেয়।

একইভাবে, ১৪ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাং ঘটার ১০^-৩৬ সেকেন্ড পর সংঘটিত হয় আরেকটি ইভেন্ট- দ্য ইনফ্লেশন (এ নিয়ে পরবর্তী পোস্টে লিখব)। এই ইনফ্লেশনের (কেকের বেক) ফলে স্পেস আলোর বেগের থেকেও বেশি বেগে প্রসারিত হওয়া শুরু করেছিলো। ইনফ্লেশন প্রমাণ করে যে মহাবিশ্বের বয়স ১৪ বিলিয়ন বছর হওয়া সত্বেও পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ব্যাস কিভাবে ৯৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ হয়।

কিন্তু আলোর গতির থেকে বেশি!
এখানে আইনস্টাইনের Special Relativity তত্ত্ব বুঝতে আমরা ভুল করি। Special Relativity তত্ত্ব অনুযায়ী কোনো বস্তু স্পেস-টাইমের ভেতর দিয়ে আলোর বেগের থেকে বেশি গতিতে যেতে পারে না।

Special Relativity তত্ত্বের মাধ্যমে আইনস্টাইন স্পেস-টাইমের ভেতর দিয়ে বস্তুর গতির লিমিট নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
কিন্তু স্বয়ং স্পেস-টাইম?
এর ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো লিমিট নির্দিষ্ট করা হয়নি।
অর্থাৎ স্পেস-টাইম নিজে আলোর গতির থেকে বেশি গতি প্রাপ্ত হতে পারে।

সুতরাং স্পেস-টাইমের গতি ফিজিক্সের কোনো নীতি ভঙ্গ করছে না। আমরা ভুলবশত বলে থাকি যে অমুক গ্যালাক্সি আমাদের লোকাল গ্রুপ থেকে আলোর গতির থেকে বেশি গতিতে সরে যাচ্ছে। কথাটা অবশ্যই সঠিক নয়। কারণ গ্যালাক্সিরও ভর আছে। তাই এটি অবশ্যই আলোর গতিতে মুভ করতে পারবে না। প্রকৃতপক্ষে কথাটি হবে- আমাদের লোকাল গ্রুপ এবং উক্ত গ্যালাক্সির মধ্যবর্তী স্পেস আলোর গতির থেকে বেশি গতিতে সরে যাচ্ছে (কেকে অবস্থিত কিশমিশ গুলোর মতো)।

  • শেষ কথা!
  • আমরা আমাদের কিশমিশ কেক প্রদর্শনে দেখতে পেয়েছি যে Local Raisin থেকে একটি কিশমিশের দূরত্ব যত বেশি সেটি তত দ্রুত বেগে সরে যায়। স্পেসের প্রসারণ সব জায়গায় সমান না। লোকাল গ্রুপ থেকে অন্য গ্যালাক্সির দূরত্ব যত বেশি সেটি তত দ্রুত গতিতে সরে যায়। এবং কিছু কিছু গ্যালাক্সি এত দূরে অবস্থিত যে সেসব ক্ষেত্রে গ্যালাক্সিগুলো আলোর গতির থেকে বেশি গতিতে সরে যেতে থাকে।


  • যেহেতু গ্যালাক্সিগুলো আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তাই এগুলো রেড শিফট দেখাবে। আর যেসব গ্যালাক্সি আলোর বেগের থেকে বেশি বেগে দূরে সরে যায় সেগুলোর রেড শিফট ক্রমশঃ ক্ষীণ হতে থাকে এবং পৃথিবী পর্যন্ত আসার আগেই বিলীন হয়ে যায়। ফলে ঐ গ্যালাক্সিগুলো আমরা কখনোই আর দেখতে পাবো না।