সাপ পরিচিতি-৩
সাপের নাম
বাংলা: কালনাগিনী (Kaalnagini), উড়ন্ত সাপ, উড়াল মহারাজ সাপ, সুন্দরী সাপ, কালসাপ, কালনাগ।
ইংরেজি নাম: golden tree snake, gliding snake, ornate flying snake, golden flying snake, gold and black tree snake, flying tree snake.
বৈজ্ঞানিক নাম: Chrysopelia ornata
হিন্দি - কালা জিন।
পরিচিতি:
বাংলাদেশের মানুষ অন্য কোন সাপের নাম যা জানলেও কালনাগিনী সাপের নাম খুব ভালভাবেই জানে। এই কালনাগিনীর পরিচিয় গ্রামের আনাচে কানাচে থেকে শুরু করে শহরের অলি গলি সব জাগাতে।
এর বড় কারণ হল কালনাগিনী বাংলাদেশের সাপের সিনেমা বা ছবি গুলির সবচেয়ে বড় চরিত্র। কালনাগিনীর প্রেম, নাগ নাগিনী ইত্যাদি অনেক ছবি বানানো হয়েছে কালনাগিনীর নামে। বেহুলা লখিন্দর এর কাহিনীতেও আছে কালনাগিনীর বড় চরিত্র।
কালনাগিনীর তীব্র বিষ ও মানুষ মৃত্যু নিয়ে নানান আজগুবি কল্প-কাহিনী সমাজে থাকলেও এরা আসলে নির্বিষ সাপ।
কাল নাগিনী বা কালনাগ এক ধরনের স্বল্প বিষধর সাপ। আকারে চিকন তাই এরা লাফিয়ে বা গ্লাইডিং করে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যেতে পারে। এই সাপের তিনটি উপপ্রজাতি আছে। এরা সবাইই সামান্য বিষধর, যার বিষ মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। এরা সাধারণত সবুজাভ হলুদের মাঝে লাল ও কালো ডোরাকাটা দাগযুক্ত হয়ে থাকে।
কালনাগিনী সাপ দেখতে অনেক সুন্দর! অনন্য সৌন্দর্যের কারণে কালনাগিনীকে সহজেই চেনা যায়। তুলনামূলকভাবে অন্য সাপের চেয়ে সরু এই সাপটি বেশ রঙ্গিন। মাথা ছোট, চ্যাপ্টা; গলা চিকন। সাদা বা সবুজাভ হলুদ দেহের উপর কালো ডোরা কাটা। তার উপর পিঠ জুড়ে লাল আর কমলা রঙের ফুলের মত সুন্দর নকশা করা। এরা বেশ চঞ্চল প্রকৃতির।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মিয়ানমারসহ এশিয়ার অনেক দেশে এদের পাওয়া যায়। ইংরেজিতে (Flying Snake) নাম হলেও সাপটি বাস্তবে উড়তে পারে না। খাদ্যগ্রহণ, বৈশিষ্ট এবং চরিত্রগত কারণে উঁচু গাছের ডাল থেকে নিচু গাছের ডালে লাফ দিয়ে চলাফেরা করে সাপটি।
স্বভাব
এরা দিবাচর। এরা শান্ত স্বভাব এর সাপ। এগুলো লাজুক প্রকৃতির, দ্রুত চলতে পারে এবং ভয় পেলে পালাবে এমন স্বভাবের তবে বেশি বিরক্ত হলে কামড়াতে পারে। এরা সহজে কামড়ায় না। তাই সাপুড়েরা এদের সহজেই খেলা দেখাতে পারে। এরা ছোট জাতের গিরগিটি, বাদুড়, ইদুর খায়। পাশাপাশি পাখির ডিম এবং ছোট কীটপতঙ্গও খায়। শিকার করার পূর্বে শিকারকে এরা দীর্ঘক্ষন অনুসরণ করে। পরে ঘাড়ের দিকে কামড়ে শিকার ধরে।
আকার
এরা আকারে চিকন ও ছোট হয়। এরা ২ ফিট থেকে ৪.৫ ফিট লম্বা হয়। এরা যখন ৩.৩ ফিট এর মত লম্বা হয়, তখন থেকেই এরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। এদের দেহ হাল্কা ও এরা ভাল গাছ বাইতে পারে। শিকারের অনুসরণ করতে করতে উঁচু গাছের ডাল থেকে নিচু গাছের ডালে লাফ দিয়ে চলাফেরা করে সাপটি। সমাজে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, মানুষ মনে করে এটা উড়তে পারে।
জুন থেকে জুলাই এদের প্রজনন মৌসুম। প্রজনন সময়ে এরা সাধারণত ৬ থেকে ১২টি ডিম দেয়, যা থেকে দুইমাস পর বাচ্চা ফুটে।
বিষ:
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে এরা সামান্য বিষাক্ত (mildly venomous), তবে সেই বিষ মানুষের শরীরের তেমন কোন ক্ষতি করে না। AVS এর প্রয়োজন হয়না। এরা কলুব্রিড জাতীয় সাপ। তাই এটি নিরাপদ একটি সাপ। এই সাপের বিষে কারও মৃত্যু হয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই।
সুতরাং, সবার কাছে রিকোয়েস্ট একটাই। কাউকে বিষাক্ত সাপে কামড়ালে কোনো কবিরাজ বা ওঝার কাছে না গিয়ে সরাসরি সরকারি হসপিটালে যাবেন। আর অধিকাংশ সাপ কিন্ত বিষধর নয় তাই সাপের কামড় মানেই মৃত্যু নয়। অনেকেই নির্বিষ সাপকে বিষাক্ত মনে করে হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন