শুক্রবার, ৫ মে, ২০২৩

এনভেলপ প্যারাডক্স

এনভেলপ প্যারাডক্স

  আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

চলুন একটি খেলা খেলি। আপনাকে একটা খাম দিলাম। খুলে দেখলেন, এতে ২০ টাকা আছে। আর এদিকে আমার হাতে আছে আরেকটি খাম। আপনাকে জানালাম, আমার হাতের খামে হয় ১০ বা ৪০ টাকা আছে। মানে আপনার খামের টাকার অর্ধেক বা দ্বিগুণ। দুই পরিমাণের সম্ভাবনা সমান ৫০% করে। আপনাকে দুটো অপশন দিলাম।



২. খাম বদলে নিলে গড়ে ৫ বার ১০ টাকা আর ৫ বার ৪০ টাকা পাবেন। তাহলে মোট পাবেন ১০ x ৫ + ৪০ x ৫ = ৫০ + ২০০ = ২৫০।

১০ বারে ৫ বার করেই দুটো ধরার কারণ, সম্ভাবনা ৫০% করে হওয়া।

তাহলে দেখা গেল, পাল্টালে লাভ। দারুণ!

আরেকটা খেলা!

আমার হাতে আছে দুটো খাম। কোনটায় কত আছে তা আপনাকে জানাইনি। শুধু বললাম, একটায় আরেকটার দ্বিগুণ টাকা আছে। আপনাকে বললাম, ইচ্ছামতো একটা তুলে নিন। তবে আগের মতো ভেতরে কত আছে তা দেখা যাবে না। এবারও আপনাকে দুটো অপশন দিলাম।

১. তোলা খামটা রেখে দিন।

২. অন্য খামটা নিন, যাতে অর্ধেক বা দ্বিগুণ টাকা আছে।

আপনি কি খামটা পাল্টাবেন?

হিসাবে কী আসে দেখি!

ধরুন তোলা খামটায় ক পরিমাণ টাকা আছে। তাহলে অন্য খামে আছে হয় ক/২ বা ২ক টাকা। দুটো পরিমাণেরই সম্ভাবনা সমান ৫০%।

আগের মতো ১০ বার কাজটা করলে কী হয় দেখি।

১. না পাল্টালে পাবেন ক x ১০ = ১০ক টাকা

২. পাল্টালে পাবেন ২ক x ৫ + ক/২ x ৫ = ১০ক + ৫ক/২ = ১২.৫ ক

দ্বিতীয় অপশনে গড়ে বেশি আসে আগের মতোই। তাহলে পাল্টালে লাভ!

গাণিতিক বুদ্ধির সদ্ব্যবহার করে আপনি পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। আপনার হাতে এখন দ্বিতীয় খামটি।

এবার আমি আপনাকে আরেকটা অফার দিলাম। বললাম, খাম আরেকবার পাল্টাবেন?

আপনি প্রথম খামটার দিকে তাকালেন, যা একটু আগেই আপনার কাছে ছিল। তাকালেন, অপর খামের দিকেও। কোনটায় কী আছে জানা নেই। তবে এটা পরিষ্কার, পাল্টালেই আপনি আগের মতোই অর্ধেক বা দ্বিগুণ পাবেন। আগেই দেখেছি আমরা, পাল্টালে লাভ। অতএব, পাল্টান।

এতে করে ফিরে গেলেন আগের জায়গায়। এবারও খাম নেয়ার আগে মনে পড়ল, পাল্টে নিলে লাভের সম্ভাবনা বেশি। তাই আবার পাল্টালেন। আবার, আবার, আবার...

শেষমেশ দেখা গেল, টাকা পাওয়ার বদলে আপনি বাকি জীবন খাম পাল্টাতে পাল্টাতে সময় পার করবেন।

লেখক: প্রভাষক, পরিসংখ্যান বিভাগ, সিলেট ক্যাডেট কলেজ

শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩

তীব্র গরমে রেললাইন বেঁকে যায় কেনো?

 তীব্র গরমে রেললাইন বেঁকে যায় কেনো?

 সারা দেশে প্রচণ্ড গরম। কোথাও কোথাও ৪০-৪৬ ডিগ্রি তাপ। মানুষ তো হাপিয়ে যাচ্ছে এমনকি তীব্র গরমে রেল লাইন বেঁকে যাচ্ছে। এর তো একটা ব্যাখ্যা আছে। তাপে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি? 



রেললাইনের দুই পাতের মধ্যবর্তী স্থান ফাঁকা রাখা হয় কেনো? যখন ট্রেন চলাচল করে তখন পাত গরম হয়ে বড় হয়ে যায়। তাই দুই পাতের মধ্যবর্তী স্থান একটু ফাঁকা রাখা হয়। 

কোনো কিছু তে তাপ দিলে সেটা বড় হয়। রেললাইন অতিরিক্ত গরমের কারণে বড় হয়। দৈর্ঘেও বাড়ে আবার প্রস্থেও বাড়ে। রেললাইন বসানোর সময় দুইটা লোহার পাত এর মধ্যে একটু ফাঁকা জায়গা রেখে বসানো হয়। যাতে গরমে লোহার পাত এর আয়তন বাড়লেও লাইন এর কোনো সমস্যা না হয়। কিন্তু গরম বেশি হওয়ায় ওই ফাঁকা জায়গা পূরণ হয়ে যাওয়ার পরেও রেললাইন বৃদ্ধি পাইতে থাকে তখন ঐ লাইন বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকায় বেকে যায়।

৯/১০ এর ফিজিক্স বইতে বিস্তারিত পাবেন।

শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩

মহিলাদের মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার বিধান কি?

মসজিদে মহিলাদের নামাযের ব্যবস্থাঃ শরীয়ত কী বলে?

মুফতী নূর মুহাম্মদ

আজ পৃথিবীতে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার ছড়াছড়ি। ইসলামের শত্রুরা বিভিন্ন কৌশলে মুসলমানদের ঈমান, আকীদা, কৃষ্টি-কাল্চার ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের একটি বড় ষড়যন্ত্র মুসলিম নারীদের ঘর থেকে বের করে ইসলামী চিন্তা-চেতনাকে সমূলে বিনাশ করা। তাদের রাষ্ট্রবিরোধী, সমাজবিরোধী বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ইসলামও মুসলমানদের সুনাম ক্ষুণ্ন করা। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের এই যুগে বন্ধুবেশী বিশেষ একটি মহল সরলমনা মুসলিম নারীদের দ্বীনের দোহাই দিয়ে ঘর থেকে বের করার নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। তা হচ্ছে, সাওয়াবের লোভ এবং বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে নারীদের নামাযের জন্য মসজিদে এবং ঈদগাহে নিয়ে যাওয়া। প্রতারিত হয়ে নারী রাও অধিক সাওয়াবের আশায় গৃহকোণ ত্যাগ করে মসজিদ ও ঈদগাহে ছুটে চলছে।

অথচ নারীদের ওপর ঈদ ও জুমু’আর নামায কোনোটাই ওয়াজিব নয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্যও মহিলাদের মসজিদে না গিয়ে ঘরে পড়াতেই বেশি সাওয়াব বলে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত। তাদের জামাতে নামায আদায়ের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া শরীয়ত অনুমোদিত নয়। বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার জন্য কোরআন-হাদীসের আলোকে সামান্য আলোকপাত করা হলো।

নারীদের ঘর থেকে বের হওয়ার বিধান পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অসংখ্য হাদীসে মহিলাদের নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করার প্রতি অত্যাধিক তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সেসব আয়াত ও হাদীসসমূহ পর্যালোচনা করলে বুঝে আসে, যতদূর সম্ভব নারীদের স্বীয় গৃহে অবস্থান করা এবং একান্ত অপারগতা ব্যতীত ঘর থেকে বের না হওয়া জরুরি। মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,

“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। আর তোমাদের ঘরে আল্লাহর যে আয়াতসমূহ ও হিকমত পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রেখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।” (সূরা আহজাব, আয়াত ৩৩, ৩৪) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

“নারীগণ আপাদমস্তক ঢেকে রাখার বস্তু। যখনই সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তার প্রতি উঁকি ও কুদৃষ্টি দিতে থাকে।” (জামে তিরমিযী, হা. ১১৭৩)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, “নিঃসন্দেহে তখনই সে আল্লাহর পছন্দনীয় থাকে, যখন স্বীয় বাড়ির সবচেয়ে গোপন স্থানে অবস্থান করে।” (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা. ১৬৮৬) ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “নারীদের সৌন্দর্যের দিকে তাকানো ইবলিস শয়তানের বিষাক্ত তীরসমূহ থেকে একটি তীর।” (মুস্তাদরাকে হাকেম , হা. ৭৮৭৫, হিলয়াতুল আওলিয়া ৬/১০১)

হাকেম (রহ.) বলেন, হাদীসটি সহীহ।

সবার জানা আছে যেকোনো তীর ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র, আর বিষাক্ত তীর আরো ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী। মানুশের ঈমান-আমল নষ্ট করার এবং তাদের পথভ্রষ্ট করার অসংখ্য হাতিয়ার শয়তানের রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাধিক ভয়ঙ্কর নারী। এ ব্যাপারে শয়তানের বক্তব্য চিন্তাশীল ব্যক্তিদের চিন্তাশক্তিকে আরো গতিশীল করবে।

বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ আছেঃ যখন আল্লাহ তা’আলা নারী জাতিকে সৃষ্টি করেন, তখন ইবলিস বলল, তুমি (হে নারী) একাই আমার বাহিনীর অর্ধেকের সমতুল্য। তুমি আমার রহস্য ভেদের স্থান। তুমি আমার সেই তীর, যা কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। (মাকাইদুশ শয়তান, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, পৃ : ৫৯)

উপর্যুক্ত আয়াত ও হাদীসসমূহ থেকে বোঝা গেল, নারীদের ঘরে অবস্থান করার মধ্যেই তাদের নিজেদের এবং অন্য সকলের মঙ্গল নিহিত। নারীদের নামায একজন ব্যক্তি নারী হোক, পুরুষ হোক ঈমান আনয়ন করার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যে ইবাদতটি করতে হবে তা হলো নামায। নামায আদায় জামাতের সাথেও করা যায়, একাকীও করা যায়। নামায আদায়ের স্থান মসজিদও হতে পারে, আবার ঘর বা অন্য কোনো স্থানও হতে পারে। এসব বিষয়ে নারী-পুরুষের মধ্যে বিধানগত দিক দিয়ে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। দুজনের বিধান এক ও অভিন্ন মনে করার অবকাশ নেই। কোরআন – হাদীস ও শরীয়তের বিধিবিধান সম্পর্কে অজ্ঞ, অনভিজ্ঞ ও অপরিণামদর্শীরাই এসব বিষয়ে নারী-পুরুষকে এক কাতারে দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেখানে যথেষ্ট ছাড় দিয়ে শিথিলতা প্রদর্শন করে নারীদের একাকী ঘরে নামায আদায়ের নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন, সেখানে কিছু অপরিণামদর্শী লোক রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দেওয়া ছাড়কে উপেক্ষা করে কথিত দ্বীন ও সাওয়াবের নামে তাদের ঘর থেকে বের করে পুরুষের কাতারে দাঁড় করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের পক্ষে শরীয়তের মেজাজ বোঝা কঠিন ও অসম্ভব হওয়ারই কথা। দু’আ করি, আল্লাহ তা’আলা সকলকে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুক। এখানে নারীদের নামায প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

জামাতের বিধান নারীদের জন্য নয় :

ফরয নামায জামাতের সহিত আদায় করা পুরষদের জন্য ওয়াজিবের পর্যায়ের। অসংখ্য হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত। কিন্তু মসজিদের জামাতে নারীদের অংশগ্রহণ ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, নফলÑকোনোটাই নয়। বিভিন্ন হাদীসের আলোকে এটাই স্পষ্ট প্রমাণিত। নমুনাস্বরূপ কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত হলো।

১.

যেসব পুরুষ জরুরতবিহীন মসজিদে না এসে ঘরে নামায পড়ে তাদের বিষয়ে রাগান্বিত হয়ে রাসূল (সা.) ধমকিস্বরূপ বলেন, “যদি ঘরগুলোতে নারী ও শিশুসন্তান না থাকত তাহলে আমি এশার নামাযের ইমামতির দায়িত্ব অন্যজনকে দিয়ে কিছু যুবক দলকে দিয়ে ঘরের সব কিছু জ্বালিয়ে দিতাম।” (মুসনাদে আহমাদ, হা. ৮৭৯৬, মুসনাদে আবী দাউদ ত্বায়ালিসি, হা. ২৪৪৩)

উক্ত হাদীসে নারী ও শিশু না থাকলে ঘর জ্বালানোর কথা এ জন্যই বলা হয়েছে যেহেতু মহিলা ও শিশুর ওপর মসজিদের জামাত নেই, তাই এখানে বালেগ পুরুষদেরই উক্ত ধমকি দেওয়া হয়েছে। এতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে মসজিদের জামাতের বিধান নারীদের জন্য নয়।

২.

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,  “ওই সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার জীবন! আমার ইচ্ছা হয় কাউকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ প্রদান করি। আর কাউকে আযান দেওয়ার হুকুম করি। অতঃপর একজনকে ইমামতি করার আদেশ করে স্বয়ং নিজে গিয়ে সেসব পুরুষের ঘর জ্বালিয়ে দিই, যারা জামাতে অংশগ্রহণ করেনি।” (বোখারী হা. ৭২২৪)

এই হাদীসে শুধুমাত্র পুরুষদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ধমকি দেওয়া হয়েছে। বোঝা গেল নারীদের জামাতে অংশগ্রহণ করার বিধান শরীয়তে নেই।

৩.

ইবনে উমর (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত আরেক হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, নারীদের জামাতে কোনো কল্যাণ নেই।……কারণ তারা কোনো স্থানে সমবেত হলে স্ব ভাবসুলভ আলাপচারিতায় মত্ত হয়। (আল মুজামুল কাবীর, হা. ১৩২২৮)

মুসলমান মাত্রই এ কথা জানে যে মসিজদ ইবাদতের জায়গা। আলাপচারিতার স্থান নয়। আর এটাও বাস্তব সত্য যে, নারীদের স্বভাবসুলভ ব্যাপার হলো, তারা কোনো স্থানে একত্রিত হলে পরস্প রে বিভিন্ন আলাপচারিতায় মগ্ন হয়, যা মসজিদের পবিত্রতার পরিপন্থীÑকোনো সন্দেহ নেই।

এ কারণেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের সমবেত হওয়ার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই মর্মে ঘোষণা করেছেন। এর পরও কি দ্বীন ও সাওয়াবের দোহাই দিয়ে নারীদের  জামাতে অংশগ্রহণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, কল্যাণকর বলার অবকাশ আছে? নাকি সরলমনা মুসলিম নারীদের নামাযের নামে মসজিদে একত্রিত করে তাদের দ্বারা রাষ্ট্রবিরোধী এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করিয়ে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে ধূলিস্যাৎ করে দেওয়াই কোনো কুচক্রী মহলের অভীষ্ট লক্ষ্য। দৈনিক খবরের কাগজে নজর বোলালেও এর সত্যতার প্রমাণ মেলে।

জুমু’আর নামাযে নারীদের অংশগ্রহণ :

নারীদের জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে আলাদা সুব্যবস্থা রাখার জন্য অনেকে নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে। তারা মনে করে, এটা অনেক বড় সাওয়াব ও পুণ্যের কাজ। কথিত এই দ্বীনি কাজের জন্য তাদের মাতম চোখে পড়ার মতো।

কারো মাতমে প্রভাবিত না হয়ে আমাদের দেখতে হবে, বুঝতে হবে ইসলামী শরীয়ত নারীদের ওপর জুমু’আর নামায পড়ার বিধান রেখেছে কি না? হাদীসের বিশাল ভান্ডার অনুসন্ধান করে দেখা যায়, নারীদের ওপর জুমু’আ ওয়াজিব নয়। তাদের কোনো জুমু’আ নেই। এখানে কিছু হাদীস প্রদত্ত হলো।

১.

হযরত আবু মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “জামাতে জুমু’আর নামায পড়া প্রত্যেক মুসলমানের ওপর অকাট্য ওয়াজিব, তবে ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব নয়। (সুনানে আবী দাউদ, হা. ১০৬৭, মুস্তাদরাকে হাকেম, হা. ১০৬২)

ইমাম হাকেম (রহ.) বলেন, হাদীসটি ইমাম বোখারী ও মুসলিম (রহ.)-এর শর্ত অনুযায়ী সহীহ। হাফেয যাহাবি (রহ.)ও হাদীসটি সহীহ বলেছেন। (আল মুস্তাদরাক-টীকাসহ-১/২৮৮)

২.

হযরত মুহাম্মদ ইবনে কা’ব আল কুরাযী (রহ.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে তার ওপর জুমু’আ ফরয, তবে ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব নয়।” (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা. ৫২০০)

হাদীসটির বিশুদ্ধতায় কোনো সন্দেহ নেই। (দেখুন, মা’রিফাতুস সুনানী ওয়াল আসার, হা. ৬৩৬৩)

সাহাবায়ে কেরামের পদক্ষেপ :

সাহাবায়ে কেরামের যুগে কোনো নারী জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে চলে এলে তাঁরা তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করতেন? কী পদক্ষেপ নিতেন? নিম্নের বর্ণনাসমূহ দ্বারা বিষয়টি অনুধাবন করা যায়।

১.

হযরত আবু আমর শায়বানী (রহ.) থেকে বর্ণিত, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জুমু’আর দিন নারীদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা মসজিদ থেকে বের হয়ে ঘরে চলে যান। কারণ আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য নামাযের উত্তম স্থান। (আল মু’জামুল কাবীর, হা. ৯৪৭৫)

আল্লামা হাইসামী (রহ.) বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। (মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩৫)

২.

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) জুমু’আর নামায পড়ার জন্য কোনো নারী মসজিদে এলে তার দিকে পাথর ছুড়ে মারতেন এবং তাদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। (উমদাতুল কারী ৬/১৫৭)

৩.

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তিনি জুমু’আর দিন নারীদের পাথর মেরে মেরে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৭৬১৭)

উপর্যুক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে বোঝা গেল, সাহাবায়ে কেরাম নারীদের জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে ব্যবস্থা রাখা তো দূরের কথা, কেউ চলে এলে তাকে বারণ করতেন এবং বের করে দেওয়ার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। উল্লেখ্য, তাঁদের এই পদক্ষেপ নারী জাতিকে অপমান করার উদ্দেশ্যে নয়। বরং আল্লাহর আজাব থেকে তাদের এবং মুসলিম উম্মাহকে বাঁচানোর জন্য ছিল। এই হলো ইসলামের সোনালি যুগের ঘটনা। যে যুগের লোকদের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হওয়ার স্বীকৃতি স্বয়ং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের মোবারক যবানে দিয়েছেন। প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর পর আজও সাহাবাদের আমল থেকে বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও অন্তরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের শিক্ষণীয় অনেক কিছুই আছে।

নারীদের নামাযের সর্বোত্তম স্থান :

মুসলমান মাত্রই তার ভেতর এই আবেগময় প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে যে পুরুষরা তো মসজিদে জামাতের সহিত নামায আদায় করে অসংখ্য নেকী অর্জনে সক্ষম। দ্বীনদার মুসলিম নারীরা মসজিদে যেতে না পারলে এই নেকী কিভাবে অর্জন করবে? এই আবেগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু সব কাজ আবেগের বশীভূত হয়ে করা যায় না। বিপদ ডেকে আনতে পারে।

বিশেষ করে নামাযের মতো একটি ইবাদত আবেগ দিয়ে নয় বরং দলিল ও প্রমাণের আলোকে সম্পাদন করতে হবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মতের নারী সদস্যদের এই আবেগের যথার্থ মূল্যায়ন করে মসজিদে গিয়ে নামায পড়ার চেয়ে বেশি সাওয়াব অর্জনের পথ ও স্থ ান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং ঘোষণা করেছেন, নারীগণের ঘরের নির্জন কক্ষের নামায মসজিদের নামাযের তুলনায় বেশি ফজীলতপূর্ণ। এ মর্মে কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত হলো।

১.

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত,  “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, নারীদের ক্ষুদ্র কক্ষের নামায বড় কামরার নামাযের তুলনায় উত্তম। ঘরের নির্জন কোণের নামায ক্ষুদ্র কক্ষের নামাযের তুলনায় উত্তম।” (আবু দাউদ, হা. ৫৭০)

অপর বর্ণনায় হাদীসটি হযরত উম্মে সালামা (রা.)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা) থেকে আরো বর্ধিতভাবে বর্ণিত হয়েছে, “এবং নারীদের বাড়িতে নামায পড়া বাড়ির বাইরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।” (আল মু’জামুল আওসাত, হা. ৯১০১) ইমাম নববী (রহ.) বলেন, হাদীসটির সূত্র ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায় সহীহ। (খুলাসাতুল আহকাম ২/৬৭৮)

ইমাম হাকেম (রহ.) বলেন, হাদীসটি ইমাম বোখারী ও মুসলিম (রহ.)-এর শর্ত অনুযায়ী সহীহ। হাফেয যাহাবী (রহ.)-ও তাঁর সমর্থন করেছেন। (আল মুস্তাদরাক-টীকাসহ-১/২০৯)

২.

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে আরো বর্ণিত আছে, “নারীদের কোনো নামায আল্লাহর নিকট তার ওই নামায অপেক্ষা পছন্দনীয় নয়, যা সে তার ঘরের অন্ধকার কক্ষে আদায় করে। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ২১১৫)

নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ :

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরের নির্জন কক্ষকে নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ আখ্যায়িত করেছেন এবং সেখানে আদায়কৃত নামাযের সাওয়াব শুধু সাধারণ মসজিদই নয় বরং মসজিদে নববীতে আদায়কৃত নামাযের সাওয়াবের চেয়েও বেশি বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। হযরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ তাদের ঘরের নির্জন কক্ষ। (মুসনাদে আহমাদ, হা. ২৬৫৪২)

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা বুসিরী (রহ.) বলেন, হাদীসটির সূত্র সহীহ। (ইতহাফুল খিয়ারাতিল মাহারা ২/৬৪)

৩.

আব্দুল্লাহ ইবনে সুয়াইদ আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা উম্মে হুমাইদ (নামক একজন মহিলা সাহাবী), যিনি আবু হুমাইদ সা-ইদি (রা.)-এর স্ত্রী, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে নামায আদায় করতে আগ্রহী। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, “আমি জানি তুমি আমার সাথে নামায আদায় করতে পছন্দ করো। কিন্তু তোমার জন্য গৃহের অন্দরমহলে নামায পড়া উত্তম; বড় কামরার তুলনায়। বড় কামরায় নামায পড়া উত্তম বারান্দার চেয়ে। বারান্দা উত্তম তোমার পাড়ার মসজিদের চেয়ে। নিজ পাড়ার মসজিদ উত্তম আমার মসজিদ থেকে।” এ কথা শোনার পর উম্মে হুমাইদ (রা.) তাঁর গৃহের নির্জন স্থানে একটি নামাযের স্থান বানানোর নির্দেশ দিলেন এবং সেখানেই মৃত্যু পর্যন্ত নামায আদায় করেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা. ২৭০৯০, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হা. ১৬৮৯)

হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, হাদীসটি হাসান। (ফাতহুল বারী ২/২৯০)

এই হাদীসে মুসলিম নারীদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছুই আছে। মসজিদে নববীতে নামাযের ফজীলত : হযরত আবু হোরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত বোখারী শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী, “মসজিদে নববীর এক নামাযে অন্য মসজিদের এক হাজার নামাে যর সাওয়াব পাওয়া যায়।” (বোখারী, হা. ১১৯০)

অপর হাদীসে রয়েছে, “একাকী নামাযের তুলনায় জুমু’আর মসজিদের নামাযে পাঁচ শত গুণ সাওয়াব বেশি।”

এতে প্রমাণিত হলো, একাকী নামাযের তুলনায় মসজিদে নববীর নামাযে পাঁচ লক্ষ গুণ সাওয়াব বেশি। তাহলে এবার চিন্তা করে দেখুন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘোষণা থেকে বোঝা যায়, নারীদের “ঘরের নির্জন কক্ষে” আদায়কৃত নামাযের সাওয়াব মসজিদে নববীতে আদায়কৃত নামাযের চেয়ে পাঁচ লক্ষ গুণ বেশি উত্তম !!!

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে বিরোধিতা :

পরিতাপের বিষয় হলো, আজকাল কিছু লোক সরলমনা মুসলিম নারীদের মসজিদে গিয়ে জামাতে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে সুন্নাত মনে করে। সুন্নাত জিন্দা করার নাম দিয়ে তারা এই মিশনকে বাস্তবায়ন করার জন্য পুরোদস্তুর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

শুধু মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধেই নয় বরং স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিরুদ্ধেও। যদি মসজিদে এসে নারীদের নামায আদায় ওয়াজিব সুন্নাত, মুস্তাহাব, নফল কোনো একটি বিধানের আওতায় পড়ত তবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নারীদের ঘরের নির্জন কক্ষে আদায়কৃত নামাযকে মসজিদে নববীতে আদায়কৃত নামাযের তুলনায় বেশি ফজীলতপূর্ণ কেন বললেন?

তবে কি তাদের ভাষায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুসলিম নারীদের সুন্নাত পরিপন্থী কাজের প্রতি উৎসাহিত করেছেন? নাউযুবিল্লাহ।

মনে রাখতে হবে, একজন রাসূলপ্রেমিক সাচ্চা মুমিনের দৃঢ়বিশ্বাস এটাই হতে হবে যে মসজিদে হারাম এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের পর সর্বোত্তম মসজিদ মসজিদে নববী। পৃথিবীর সমস্ত মসজিদের সমন্বিত ফজীলত মসজিদে নববীর সমমানের কস্মিনকালেও হবে না। বরং কোনো মসজিদকে মসজিদে নববীর সাথে তুলনা করাটাই চরম ধৃষ্টতা এবং চূড়ান্ত মূর্খতা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইচ্ছার প্রতিফলন :

হাদীসের সঠিক মর্ম বোঝার জন্য সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম-এর আমলকেও সামনে রাখতে হবে। বস্তুত সাহাবায়ে কেরাম থেকে রাসূল (সা.)-এর আদর্শবিরোধী কোনো কাজ প্রকাশ পাবেÑসেটা কল্পনাও করা যায় না।

তাই হাদীস শরীফের পাশাপাশি সাহাবীগণের আমলও দলিলরূপে গণ্য। কারণ তাঁরা ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহচর। তাঁরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মেজাজ বুঝতেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কথা ও কাজের মর্ম অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা উপলব্ধি করতে পারতেন। তাই তো অনেক চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন বাস্তবায়ন সাহাবীগণের যুগে ঘটবে বলে সহীহ হাদীসে রাসূল (সা.) সুস্পষ্ট বলে গিয়েছেন, “তোমরা আমার পরে খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে যেমন মাড়ির দাঁত দিয়ে কোনো জিনিস মজবুতভাবে ধরা হয়।” (সুনানে আবী দাউদ, হা. ৪৬০৭)

অপর হাদীসে হযরত হুযাইফা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন “জানি না আমি কত দিন তোমাদের মধ্যে থাকব। আমার পরে তোমরা আবুবকর ও উমরের অনুসরণ করবে।” (তিরমিযী, হা. ৩৬৬৩, মুস্তাদরাকে হাকেম, হা. ৪৪৫১, ৪৪৫৫)

ইমাম হাকেম (রহ.) হাদীসটি সহীহ বলেছেন।

হাফেয যাহাবী (রহ.)ও হাদীসটি সহীহ বলেছেন। (আল মুস্তাদরাক-টীকাসহ-৩/৭৯, ৮০)

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) স্বীয় খিলাফত আমলে যখন নারীদের বিগড়ে যাওয়ার অবস্থা উপলব্ধি করলেন এবং ফেতনার আশঙ্কাও দিন দিন বাড়তে লাগল তখন তিনি এবং উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা ছিদ্দীকা, ইবনে মাসউদ ও ইবনুয যুবায়ের (রা.)সহ বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম নারীদের মসজিদে না আসার আদেশ জারি করলেন।

অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামও এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন। কেননা তাঁরা জানতেন যে নারীদের মসজিদে আসতে নিষেধ করার মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশের বিরোধিতা করা হয়নি, বরং তাঁর ইচ্ছারই প্রতিফলন হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো হুকুমের বিরোধিতা করার কল্পনাও করা যায় না। এতদসত্ত্বেও তাঁরা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এ জন্য যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মনোবাসনা এটাই ছিল।

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.), যিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মেজাজ বুঝতেন, চাহিদা উপলব্ধি করতেন তাঁর উক্তি থেকেই বিষয়টি প্রতিভাত হয়। তিনি বলেন, “নারীরা যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে তা যদি রাসূল (সা.) দেখতেন, তবে বনী ইসরাঈলের নারীদের যেমন নিষেধ করা হয়েছিল, তেমনি এদেরও মসজিদে আসা নিষেধ করে দিতেন।” (সহীহ বোখারী, হা. ৮৬৯)

বোখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (রহ.) উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, “বর্তমান যুগে নারীরা শরীয়তবিরোধী যেসব পথ অবলম্বন করছে , পোশাক-পরিচ্ছদ আর রূপচর্চায় তারা যে নিত্যনতুন ফ্যাশন আবিষ্কার করছে, যদি উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা.) এই দৃশ্য দেখদেন তাহলে আরো কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেন।” (উমদাতুল কারী ৬/১৫৮)

আল্লামা আইনি (রহ.) আরো বলেন, “হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা (রা.)-এর উক্ত মন্তব্য তো রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দুনিয়া থেকে বিদায়ের কিছুদিন পরের নারীদের সম্বন্ধে। অথচ এ যুগের নারীদের বেহায়াপনার হাজার ভাগের এক ভাগও সেকালে ছিল না। তাহলে এ অবস্থ া দেখলে তিনি কী মন্তব্য করতেন?” (উমদাতুল কারী ৬/১৫৯)

এখানে চিন্তার বিষয় হলো, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (রহ.) স্বীয় যুগ তথা হিজরী নবম শতাব্দীর নারীদের সম্বন্ধে এ কথা বলেছেন। তাহলে আজ হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর এ যুগে সারা বিশ্ব যে অশ্লীলতা আর উলঙ্গপনার দিকে ছুটে চলেছে। বেপর্দা আর বেহায়াপনার আজ যে ছড়াছড়ি, মেয়েরা যখন পুরুষের পোশাক পরছে, পেট-পিঠ খুলে রাস্তা-ঘাটে বেড়াচ্ছে, সমানাধিকারের স্লোগান দিয়ে শরীয়তের বিধানাবলির লঙ্ঘন করছে। বোরকার মতো পবিত্র পোশাকের পবিত্রতা নষ্ট করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে এই ফেতনা-ফ্যাসাদের মধ্যে অবলা মা-বোনদের সাওয়াবের রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে মসজিদে আর ঈদগাহে টেনে আনার অপচেষ্টা বোকামি বৈ কিছু নয়। অথচ দলিল-প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগের নারীদের।

প্রশ্ন হলো, এ যুগের নারীরা কি সে যুগের নারীদের মতো? কস্মিনকালেও না। তা সত্ত্বেও সে যুগেই মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে এ যুগের মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে গিয়ে নামাযের জন্য উৎসাহিত করা হবে?

ইমাম ইবনে আব্দিল বার (রহ.) স্বীয় কিতাব ‘আততামহীদ’-এ উল্লেখ করেন, স্ত্রী আতেকা বিবাহের সময় স্বামী উমর (রা.)-কে মসজিদে নববীতে গিয়ে নামাযের অনুমতি দেওয়ার শর্ত করেছিলেন, এ জন্য উমর (রা.) অপছন্দ করা সত্ত্বেও স্ত্রীকে নিষেধ করতে পারছিলেন না। কিন্তু উমর (রা.)-এর ইন্তেকালের পর হযরত যোবায়ের (রা.)-এর সাথে আতেকার বিবাহের পর স্বামী হযরত যোবায়ের (রা.)ও তাঁর মসজিদে যাওয়া অপছন্দ ও নিষেধ করতেন। তারপর কৌশলে তাঁর বের হওয়া বন্ধ করেন।

একদিন যখন আতেকা এশার সময় বের হলেন যোবায়ের (রা.) লুকিয়ে তাদের পশ্চাৎদেশে খোঁচা দিলেন। ওই দিন আতেকা (রা.) ঘরে ফিরে এসে বললেন, আল্লাহর পানাহ! মানুষ বিগড়ে গিয়েছে। অতঃপর আর কোনো দিন নামাযের জন্য ঘর থেকে বের হননি। (আল ইসাবাহ ৮/২২৮)

হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা :

অনেকে একটি হাদীসের অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে মসজিদে গিয়ে নারীদের নামায আদায় সুন্নাত বা সাওয়াবের কাজ প্রমাণ করার অপচেষ্টা করে থাকে। হাদীসটি হযরত ইবনে উমর (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, আল্লাহর বান্দিদের আল্লাহর মসজিদ থেকে নিষেধ করো না। (বোখারী, হা. ৪৪২)

এক শ্রেণীর লোক হাদীসের শাব্দিক অনুবাদ থেকে এটাই বোঝে যে মসজিদে গিয়ে নারীদের নামায পড়া সুন্নাত। তাদের মসজিদে যেতে বাধা দেওয়া যাবে না। এটা অন্যায়-গোনাহের কাজ।

সঠিক ব্যাখ্যা :

হাদীসটির সঠিক ব্যাখ্যা জানার আগে হাদীসটির মতন ‘মূল ভাষ্য’ জেনে নেওয়া সমীচীন। হাদীসের কিতাবপত্র অধ্যয়ন করলে হাদীসটির মতনে ‘মূল ভাষ্যে’ কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তবে সূত্র, অর্থাৎ বর্ণনাকারী সাহাবী একজন। তিনি হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)। নি¤েœ বর্ণনাগুলোর ভিন্নতা তুলে ধরা হলো। এক বর্ণনায় আছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অন্য এক বর্ণনায়ও আছে।

উভয় হাদীসের শাব্দিক অর্থ একই। অর্থাৎ তোমাদের কোনো স্ত্রী লোক তোমাদের কাছে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে তাকে নিষেধ করো না। (বোখারী, মুসলিম) আরেক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমাদের স্ত্রী লোকদের মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য ইবাদতের সর্বোত্তম স্থান। (আবু দাউদ : ৫৬৭)

পর্যালোচনা :

ওপরে আমরা ইবনে উমর (রা.)-এর সূত্রে একই বিষয়ে বর্ণিত হাদীসের চার ধরনের মতন তথা মূল ভাষ্য পেলাম। যার থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট বুঝে আসে। এক. নামাযের জন্য নারীদের মসজিদে গমন করা ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব বা নফল কোনো বিধানের আওতায় পড়ে না।

কেউ এই হাদীস দ্বারা কোনো একটি বিধানের প্রমাণ করার চেষ্টা করলে সেটা হবে তার দ্বীনি জ্ঞানের ব্যাপারে দৈন্যতার প্রমাণ। কারণ কেউ যদি কাউকে বলে, তুমি অমুককে অমুক স্থানে যেতে বাধা দিয়ো না। এর অর্থ এই নয় যে অমুকের জন্য সেখানে যাওয়া জরুরি বা অন্য কিছু।

চিন্তা করলে দেখা যাবে, বাধা দেওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে। তবুও বিশেষ কোনো কারণে বাধা না দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। আর সেই বিশেষ কারণটি হলো সরাসরি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শরীয়তের বিধিবিধাান শেখা ও জানা। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গে এ কারণটিও রহিত হয়ে যায়।

দুই.

স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোনো নারী ধর্মীয় কাজের জন্যও ঘর থেকে বের হতে পারবে না।

তিন.

কোনো নারী নামাযের জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে স্বামী বা অভিভাবক তাকে অনুমতি দিতে বাধ্য নয়। বরং যথাসাধ্য বোঝানোর চেষ্টা করবে যে নারীদের জন্য ঘরে অবস্থান করা এবং ঘরের নির্জন কক্ষে নামায আদায় করা মসজিদে গিয়ে আদায় করার চেয়ে অনেক বেশি ফজীলতপূর্ণ।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাদীসটির দ্বিতীয় অংশে ‘তাদের ঘরই ইবাদতের সর্বোত্তম স্থান’ বলে স্বামী ও অভিভাবকদের এই দিকনির্দেশনাই দিয়েছেন এবং নারীদের এ কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে মসজিদ নয়, ঘরই হলো তাদের নামাযের সর্বোত্তম স্থান। হাদীসের মূল ভাষ্যে সামান্য চিন্তা করলেই এই বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া এ মর্মে আরো কিছু হাদীস ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

চার.

শরীয়তের একটি মূলনীতি হলো, হাদীসের বর্ণনাকারী সাহাবী যদি নিজেই তার সূত্রে বর্ণিত হাদীসের বিপরীত আমল করেন, তাহলে ওই হাদীসটি আমল ও প্রমাণযোগ্য থাকে না। বরং বুঝতে হবে হাদীসটির বিধান রহিত হয়ে গেছে অথবা সাধারণ মানুষ বাহ্যিকভাবে যা বোঝে হাদীসের প্রয়োগ ক্ষেত্র তা নয়, অন্য কিছু। বা বুঝতে হবে হাদীসি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ।

ইবনে উমর (রা.)-এর আমল :

পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে হাদীসটি ইবনে উমর (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত। আরো উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য আগত নারীদের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করতেন এবং তাদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। অন্য আরেক বর্ণনায় উল্লেখ করা হবে, তিনি পরিবারের নারী সদস্যদের ঈদের নামাযে অংশগ্রহণ করার জন্য ঘর থেকে বের হতে দিতেন না।

এ ছাড়া তাঁর সূত্রে এই হাদীসও উল্লেখ করা হয়েছে যে নারীদের জামাতে কল্যাণ বলতে কিছু নেই। ইবনে উমর (রা.)-এর বাস্তব আমল তার সূত্রে বর্ণিত হাদীসের বিপরীত হওয়াটা কি এই বার্তা বহন করে না যে হাদীসটির বিধান রহিত হয়ে গেছে বা প্রয়োগ ক্ষেত্র বাহ্যিকভাবে যা বুঝে আসে তা নয় বরং অন্য কিছু। এর পরও একটি মহল মসজিদে নারীদের নামাযের ব্যবস্থার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেপড়ে লাগা সরলমনা মুসলমানদের সাথে প্রতারণা ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশবিশেষ।

পাঁচ.

রাষ্ট্রপ্রধান, ইমাম ও অভিভাবকদের দায়িত্ব।

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বিদগ্ধ হাদীস বিশারদ আল্লামা ইবনে হজর মক্কী (রহ.) বলেন, “যখন মসজিদে বা পথে পুরুষের সাথে মেলামেশা অথবা নারীদের অত্যধিক রূপচর্চা বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনার কারণে ফিতনার আশঙ্কা হয় তখন তাদের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে যাওয়া হারাম এবং তারা মসজিদে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে স্বামী বা অভিভাবকদের অনুমতি প্রদান করাও হারাম। আর রাষ্ট্রপ্রধান, ইমাম বা তাঁদের প্রতিনিধিগণের ওপর নারীদের মসজিদে আসা নিষেধ করা ওয়াজিব।” (মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/৮৩৬)

এই দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রপ্রধান, ইমাম, খতীব ও অভিভাবকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং মসজিদের প্রতিষ্ঠাতাগণ ও ব্যবস্থাপকগণকেও এ ব্যাপারে কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ঈদের নামাযে নারীদের অংশগ্রহণ : জুমু’আ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ন্যায় ঈদের নামাযের জন্যও নারীদের ঘর থেকে বের করে আনার অপতৎপরতা চোখে পড়ার মতো।

এ ব্যাপারে সাহাবা, তাবেঈগণের অবস্থান নিম্নে তুলে ধরা হলো।

১.

হযরত ইবনে উমর (রা.) তাঁর স্ত্রীগণকে ঈদগাহে বের হতে দিতেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হা. ৫৭৯৫)

সনদের বিচারে হাদীসটি হাসান।

২.

হযরত ইবরাহীম নাখঈ (রহ.) দুই ঈদে নারীদের বের হওয়াকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হা. ৫৭৯৪)

সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি সহীহ।

৩.

আব্দুর রহমান ইবনে কাসেম (রহ.) বলেন, ইমাম কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ (রহ.) নারীদের ব্যাপারে অনেক কঠোর ছিলেন, নারীদেরকে কখনো ঈদুল ফিতর ও আজহার সময় বের হতে দিতেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হা. ৫৭৯৭)

৪.

হজরত হিশাম ইবনে ওরওয়া (রহ.) বলেন, তাঁর পিতা ওরওয়া ইবনে যুবায়ের পরিবারের কোনো নারীকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাযে যেতে দিতেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হা. ৫৭৯৬)

সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি সহীহ।

৫.

হজরত নাফে (রহ.) তাঁর ঘরের নারীদেরকে ঈদগাহে বের হতে দিতেন না। (মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক হা. ৫৭২৪)

সূত্রের বিচারে হাদীসটি সহীহ।

দুটি সন্দেহ ও তার নিরসন :

সন্দেহ : ১.

কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, যদি বর্তমান যুগে নারীদের মসজিদে যাওয়া ফেতনার আশঙ্কায় নিষেধই হয় তাহলে রাসূল (সা.) স্পষ্ট এ কথা বলে যাননি কেন যে আমার যুগের পর নারীদের মসজিদে আসা নিষেধ?

নিরসন :

এর নিরসন হলো, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শরীয়তের অসংখ্য বিধানাবলির ক্ষেত্রেই এরূপ করে গিয়েছেন যে তা স্পষ্ট করে বলে যাননি। তিনি জানতেন ও বুঝতেন যে প্রিয় সাহাবীগণ তাঁর সকল কথার মর্ম ও উদ্দেশ্য বুঝেই পরবর্তীতে আমল করবেন। তাই সব কথা স্পষ্ট করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-এর পরে আবুবকর (রা.)-কে খলিফা বানানোর কথা স্পষ্ট বলে যাননি।

কেননা তিনি বুঝেছেন যে তাঁর সাহাবীগণ বিভিন্ন আকার-ইঙ্গিতে তাঁর উদ্দেশ্য বুঝে নিয়েছেন, এখন আর তাঁদের তা স্পষ্ট বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের আলোচিত বিষয়টিও তদ্রƒপ। নারীদের ফেতনা ও নারীদের পর্দাসংক্রান্ত শত শত হাদীস থাকা সত্ত্বেও সাহাবীগণ এ বিষয়ে রাসূল (সা.)-এর ইচ্ছা বুঝবেন না, তা অসম্ভব।

সন্দেহ : ২.

অনেক ভাই বলে থাকেন যে মক্কা-মদীনার হারামাইন শরীফে নারীগণ মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

নিরসন :

আসলে হারামাইনে কিছু জরুরতের ভিত্তিতে নারীগণের জামাতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা হলো, নারীগণ যেহেতু মক্কার মসজিদে হারামে তাওয়াফের জন্য আসতে হয় এবং মদীনার মসজিদে নববীতে জিয়ারতের জন্য এসে থাকেন। এমতাবস্থায় নামাযের আযান হয়ে গেলে বের না হয়ে মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। উলামায়ে কেরাম এ ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়েছেন। তবে শুধুমাত্র জামাতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে নারীগণ হারামাইনে যাওয়ারও অনুমতি নেই। বর্তমানে না জেনে অনেক নারী শুধু নামাযের জন্যই হারামাইনে উপস্থিত হয়ে থাকেন, তা ঠিক নয়। (দেখুন : ই’লাউস সুনান ৪/২৩১) তাঁরা নিজেদের হোটেলে নামায আদায় করলে মসজিদে হারামে নামায পড়ার চেয়ে বেশি সাওয়াব পাবে। যা হাদীসে ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩

গুগল এডসেন্স একাউন্ট খোলার নিয়ম ২০২৩

গুগল এডসেন্স একাউন্ট খোলার নিয়ম : গুগল এডসেন্স একাউন্ট কিভাবে ওয়েবসাইটের জন্য তৈরি করতে হয় সেই বিষয়ে আমরা আজ আপনাকে জানাবো।

বর্তমানে আমাদের মধ্যে অনেক লোক আছে যারা গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রতি মাসে প্রচুর পরিমাণে টাকা আয় করে যাচ্ছে। আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে তবে আপনি সেখানে এডসেন্স একাউন্ট খুলে আয় করা শুরু করতে পারবেন।

যারা বিভিন্ন ধরনের ব্লগ বা ওয়েবসাইট থেকে টাকা ইনকাম করার চেষ্টা করে থাকেন তারা একজন ব্লগার হিসেবে গুগল এডসেন্স একাউন্ট তৈরী করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যদি ব্লগ বা ওয়েবসাইট ভালো পরিমান ভিজিটর দিয়ে চালাতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনি গুগল এডসেন্স একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন।

কারণ প্রতিটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট গুলো ইনকাম করার মাধ্যম হচ্ছে ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে অতিরিক্ত মাসিক হওয়ার ফলে আপনার ওয়েবসাইটে ইনকাম তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।




আপনি যখন দেখবেন আপনার ওয়েবসাইটে প্রচুর পরিমানের ভিজিটর আছে সেক্ষেত্রে আপনি গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট খুলে নেবেন। আমরা জানি বর্তমান সময়ে গুগল এডসেন্স এর জন্য এত সহজ ব্যাপার নয়।

গুগল এডসেন্স পেতে গেলে অনেক শ্রম দিতে হয় আপনার ওয়েবসাইটে পর্যাপ্ত আর্টিকেল লিখতে হয় এবং আপনার আর্টিকেলটি ভিজিটরদের দেখাতে হয় আপনি ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের ডেভলপমেন্ট আছে সেগুলো যদি সঠিকভাবে উন্নত করতে পারেন তাহলে আপনি গুগোল অ্যাডসেন্সে আবেদন করে অনুমোদন পেয়ে যাবেন।

আপনি যখন গুগোল অ্যাডসেন্সে আবেদন করবেন তারপর তারা আপনার ওয়েবসাইটটি রিভিউ করে যদি ভালো মনে করে তাহলে আপনার ওয়েবসাইটটিকে অ্যাপ্রভাল দিয়ে দিবে যখন আপনাকে গুগল এডসেন্স বিজ্ঞাপনের জন্য অনুমোদন দিয়ে দিবে তখন আপনার এডসেন্স একাউন্ট থেকে আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন গুলো সেট করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন খুব সহজেই।

গুগল এডসেন্স একাউন্ট তৈরি করার জন্য কি প্রয়োজন

আপনি যদি গুগল এডসেন্স আপনার ওয়েবসাইটে খুলতে চান তাহলে আপনাকে সেই বিষয়ে কিছু জিনিস প্রয়োজন হবে। গুগোল অ্যাডসেন্সে একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে।

আপনি যে ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছেন সেটি গুগল এডসেন্স এর শর্ত অনুযায়ী হতে হবে যদি তাদের শর্ত নতে আপনি ওয়েবসাইট তৈরি করতে না পারেন তবে অ্যাডসেন্সে অ্যাপ্রভাল পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যাবে।

আপনি যদি গুগল এডসেন্স একাউন্ট খুলতে চান তবে আপনাকে যে জিনিস গুলো প্রয়োজন হবে সেগুলো হচ্ছে-

একটি জিমেইল আইডি- আপনি যখন কোন ওয়েবসাইটের জন্য গুগল এডসেন্স এ আবেদন করবেন তখন একটি গুগল আইডি যেটা দিয়ে আপনি গুগল এডসেন্স বানাবেন।

তারপর আপনার মোবাইল নাম্বার- আপনি যে মোবাইল নাম্বার দিয়ে আপনার একাউন্টি ভেরিফাই করবেন সেই মোবাইল নাম্বারটি দিতে হবে।

তারপর আপনি গুগোল অ্যাডসেন্সে যে ঠিকানাটা দিবেন সেই ঠিকানা অনুযায়ী আপনাকে একটি ভেরিফিকেশন চিঠি প্রদান করা হবে।

তারপর আপনার প্রয়োজন হবে একটি ব্লগ ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল যেখানে আপনারা বিজ্ঞাপন দেখে ইনকাম করবেন।

আপনি যদি উক্ত জিনিস গুলো সঠিকভাবে পূরণ করতে পারেন তাহলে আপনি গুগল এডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।

গুগোল অ্যাডসেন্সে আবেদন করতে হয় ?

আপনি যদি একটি ওয়েবসাইটের জন্য গুগল এডসেন্স আবেদন করেন তাহলে আপনাকে বিশেষ কিছু কাজ করতে হবে প্রথমে আপনাকে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে সেখানে সুন্দর করে ডিজাইন দিতে হবে তারপর কোয়ালিটি সম্পন্ন 1000 থেকে 15 ওয়াটের আর্টিকেল লিখতে হবে এবং আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন সেখানে পেজ তৈরি করতে হবে।

আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি আপনি যখন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন তখন সে ওয়েবসাইটে কম করে হলেও 3 থেকে 6 মাস ধরে আর্টিকেল লিখবেন নিয়ম অনুযায়ী।

আপনি যখন আপনার ব্লগ ওয়েবসাইটে 30 থেকে 40 টি আর্টিকেল লিখবেন তখন আপনি শেয়ার দিলে কম করে হলেও 1000 টাকা পনেরশো ওয়াট লিখবেন তারপর আপনার ওয়েবসাইটে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে দৈনিক 1000 থেকে 2000 ভিজিটর আসবে তখন আপনি গুগল এডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আপনি যদি সঠিকভাবে পূরণ করতে পারেন তাহলে গুগোল অ্যাডসেন্সে আবেদন করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। আর এই শর্তগুলো পূরণ করার পর আপনি অল্প সময়ের মধ্যে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পেয়ে যাবেন। আমরা জানি বর্তমানে গুগল এডসেন্স অ্যাপ্রভাল পেলে এটাকে বলা হয় সোনার হরিণ।

কিভাবে গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্ট খুলবেন ?

আপনি যদি ওয়েবসাইটের জন্য গুগল এডসেন্স একাউন্ট খুলতে চান? তাহলে কিছু বিষয়ে আপনাকে জানতে হবে। কিভাবে গুগল এডসেন্স একাউন্ট তৈরি করবেন নিজামী গান তৈরি করার সহজ নিয়ম প্রস্তুত করেছি তবে মনে রাখবেন একান তৈরি করার সময় কোন ধরনের ভুল তথ্য যুক্ত করবেন না।

আপনি যদি গুগোল অ্যাডসেন্সে আবেদন করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই নিজের নাম ঠিকানা মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি সকল তথ্য যুক্ত করতে হবে কারণ ভবিষ্যতে সবকিছু ভেরিফাই করা হবে সম্পূর্ণভাবে আচ্ছা অ্যাকাউন্ট তৈরি করার তিনটি ভাগ রয়েছে যেমন-

  • Sign up for AdSense
  • Add AdSense ad code to your blog
  • Wait for account review process

আমরা আপনাকে যে তিনটি ভাগ দেখিয়েছি এই তিনটি বিষয়ে আপনাকে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে এই তিনটিকে কাজে লাগিয়ে আপনি গুগল এডসেন্স একাউন্ট খুলতে পারবেন।


বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

রেললাইনের নিচে ব্যবহৃত এগুলা আসলে কি?

রেললাইনের নিচে ব্যবহৃত এগুলা আসলে কি?



Ans: এক্সেল ডিটেক্টর সেন্সর

রেললাইনের প্রতি ৩ থেকে ৫ কিলোমিটারের নির্দিষ্ট একটি দূরত্বে দেখতে পাওয়া যায় অ্যালুমিনিয়ামের এই বক্সটিকে। এটি আসলে যাত্রী সুরক্ষার কাজেই ব্যবহৃত হয়। রেলের ভাষায় এটিকে “অ্যাক্সেল কাউন্টার বক্স” বলা হয়।


যদি কোনো ট্রেন কোনো দুর্ঘটনার স্বীকার হয় আর সেই কারণে সেই ট্রেনের কিছু বগি বা কোচ ট্রেন থেকে আলাদা হয়ে যায় তখন এক্সেল কাউন্টার (Axle counter box) বলে দেয় যে কতগুলি চাকা বা বগি মিসিং রয়েছে। আর এর ফলে রেল কর্তৃপক্ষের বুঝতে সুবিধা হয় কটা বগি মিসিং রয়েছে ও কোন এলাকায় সেই বগি গুলি ট্রেন থেকে আলাদা হয়েছিল। আর এর ফলে দুর্ঘটনার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তদন্ত করতে সুবিধা হয়।


রেল লাইনের ধারে থাকা এই এক্সেল কাউন্টার বক্স একটি ট্রেন পাস করার পর ট্রেনের এক্সেলকে কাউন্ট করে নেয় এবং পরবর্তী কাউন্টার বক্সকে সেই ইনফরমেশন দিয়ে দেয় ও সেই কাউন্টার বক্সটিও আবার একইরকম করে কাজ করে। কিন্তু যদি এক কাউন্টার বক্সের সাথে যদি আগামী কাউন্টার বক্সের ক্যালকুলেশন ম্যাচ না করে তখন আগামী এক্সেল কাউন্টার বক্স ট্রেন থামানোর জন্য সিগ্নালকে রেড করে দেয়।

রেল লাইনে পাথর দেয় কেনো?

রেল লাইনের উপর দিয়ে রেল চলাচলের সময় পুনপুন পীড়নের সৃষ্টি হয়। এই পীড়ন কে রেজিস্ট করা, বৃষ্টির পানি যাতে লাইনে জমে না থাকে, স্লিপার কে সঠিক অবস্থানে ধরে রাখার জন্য, মাটির তুলনায় পাথরের চাপ পীড়ন বহন করার ক্ষমতা বেশি, ইদুর বা অন্য কোনো কীটপতঙ্গ যাতে গর্ত না করতে পারে, ব্যালাস্ট একটি নির্দিষ্ট গভীরতা পর্যন্ত দেওয়া হয়।

পৃথিবী ঘোরে নাকি সূর্য?

 পৃথিবী ৩৬৫.২৫ দিন পর পর সূর্যকে একবার করে প্রদক্ষিণ করে। তবে এতে করে পৃথিবী কখনোই তার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসতে পারেনা। কারণ সূর্য নামের তারাটি নিজের জায়গাতে চুপচাপ বসে থাকেনা। আমাদের এই গ্যালাক্সিতে থাকা কয়েক হাজার কোটি তারাদের মতো সূর্যও গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত ব্ল্যাকহোলকে প্রদক্ষিণ করা নিয়ে সবসময় ব্যস্ত। 


সূর্যের একটা বছর হতে সময় লাগে আমাদের পৃথিবীর সময়ের হিশেবে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর। আর সেইজন্য সূর্যকে প্রতিটা সেকেন্ডে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার করে পথ পাড়ি দিতে হয়। ফলে আমাদের পৃথিবী সূর্যকে ৩৬৫.২৫ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করলেও সূর্য প্রতিটা মুহূর্তেই পৃথিবীকে টেনে তার সাথে করে অনেকদূর নিয়ে যায়। 


এই লেখাটা পড়তে পড়তেই হয়তো আমরা সূর্যের সাথে সাথে ৩০ লক্ষ মিটার সামনে এগিয়ে গেছি। ঠিক এই মুহূর্তে আমরা এখন যেখানে অবস্থান করছি, আর কখনোই সেখানে আমরা ফিরে আসতে পারবো না! 




আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান বলছে মহাবিশ্বের পৃথিবীতে প্রতিটা বছর নতুন। প্রতিটা দিন নতুন। প্রতিটা সেকেন্ড, এমনকি প্রতিটা মুহূর্তই নতুন। প্রায় নয়টা বছর হতে চলছে থার্টিফাস্ট উদযাপন আমি করিনা। তবে সমর্থন করি। মানব জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই আনন্দের সাথে উদযাপন করা উচিৎ। প্রতিটা জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই কাটুক আনন্দ ও উল্লাসের সাথে। 

রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২

নিউটনের সূত্রসমূহ। Newton's Laws

নিউটনের সূত্র সমূহ। Newton's Laws


নিউটনের সূত্র কয়টি ও কি কি বিস্তারিত আলোচনা


নিউটনের তিনটি সূত্র। নিউটনের ১ম ২য় ৩য় সূত্র গুলি হলো যথাক্রমে -


 1️⃣ নিউটনের প্রথম সূত্র: বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল দ্বারা অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে বাধ্য না করলে, স্থির বস্তু চিরকাল স্থির অবস্থায় থাকবে এবং সচল বস্তু চিরকাল সমবেগে একই সরলরেখায় চলতে থাকবে।


 2️⃣নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র: কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে প্রযুক্ত হয়, ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে।


 3️⃣নিউটনের তৃতীয় সূত্র: প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।


নিউটনের প্রথম গতি সূত্র


নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে কি জানা যায় : নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে আমরা যে দুটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাই তা হলো – (a) পদার্থের জাড্য এবং (b) বলের সংজ্ঞা।


জাড্য কাকে বলে? জাড্য কয় প্রকার ও কি কি?


জাড্য: যে ধর্মের জন্য কোনো জড় বস্তু তার স্থিতি বা গতির অবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা করে, সেই ধর্মকে পদার্থের জাড্য বলে। বস্তুর ভর যত বেশি হয়, তার জাড্যও তত বেশি হয়। সুতরাং, বলা যায়— বস্তুর ভরই তার জাড্যের পরিমাপ।


জাড্য কয় প্রকার ও কি কি: জাড্য দু’প্রকার – (i) স্থিতি জাড্য এবং (ii) গতি জাড্য।

স্থিতি জাড্য কাকে বলে?


স্থিতি জাড্য: যে ধর্মের জন্য স্থির বস্তু চিরকাল স্থির অবস্থায় থাকতে চায়, তাকে স্থিতি জাড্য (Inertia of rest) বলে।


স্থিতি জাড্যের উদাহরণ: কোনো বাস স্থির অবস্থা থেকে হঠাৎ চলতে শুরু করলে বাসের মধ্যে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা পিছনের দিকে হেলে পড়ে। কারণ, বাসটি যখন স্থির থাকে যাত্রীর দেহও তখন স্থির থাকে। এবার বাসটি হঠাৎ চলতে শুরু করলে যাত্রীর পা দুটো গাড়ির সংলগ্ন থাকায় গাড়ির সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু তাঁর দেহের উপরের অংশ স্থিতি জাড্যের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চায়। ফলে যাত্রীরা পিছনের দিকে হেলে পড়ে।


প্রযুক্ত বল = বস্তুর ভর × বস্তুর ত্বরণ।


অর্থাৎ, P = mf ; এটিই নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্রের গাণিতিক রূপ।


একটি মালবাহী ট্রাক এবং একটি খালি ট্রাক প্রতিঘন্টায় 30 কিমি বেগে সমান দ্রুতিতে চলছে। ট্রাক দুটি হুবহু এক। ব্রেক কষে কোন্‌টিকে সহজে থামানো যাবে?


ব্রেক কষে খালি ট্রাকটিকে সহজে থামানো যাবে। কারণ, মালবাহী ট্রাকটির ভর খালি ট্রাকটির ভরের চেয়ে বেশি। তাই মালবাহী ট্রাকটির ভরবেগ খালি ট্রাকটির ভরবেগের চেয়ে বেশি হবে। কারণ, ট্রাকের ভরবেগ = ট্রাকের ভর × ট্রাকের বেগ। ফলে, ব্রেক কষে মালবাহী ট্রাকটিকে থামাতে খালি ট্রাকের তুলনায় অনেক বেশি বিরুদ্ধ বল প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ, খালি ট্রাকটিকে মালবাহী ট্রাকটি থেকে অনেক সহজে থামানো যাবে।


75 নিউটন বল কোনো বস্তুর উপর ক্রিয়া করে 3 m/s2 ত্বরণ সৃষ্টি করে। বস্তুটির ভর নির্ণয় করো।


নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র থেকে পাই, p = mf বা, m = ...... (i)

এখানে বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বল = p = 75 নিউটন, বস্তুতে উৎপন্ন ত্বরণ = f = 3 m/s2 এবং বস্তুর ভর = m = ?

সুতরাং, (i) থেকে পাই, m = 75/3 kg = 25 kg.

সুতরাং, নির্ণেয় ভর = 25 কিগ্রা।


বল কি ধরনের রাশি? বলের একক গুলি কি কি?


বলের রাশি : বলের মান ও অভিমুখ দুই-ই আছে। তাই বল একটি ভেক্টর রাশি।

বলের পরম একক (Absolute units of force) কি?

CGS পদ্ধতিতে বলের পরম একক : ডাইন (Dyne).

ডাইন : এক গ্রাম ভরের কোনো বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে যে বল বস্তুটিতে 1 cm/sec² ত্বরণ সৃষ্টি করে, সেই বলকে এক ডাইন বলে।

অর্থাৎ, 1 ডাইন = 1 g × 1 cm/sec².


SI পদ্ধতিতে বলের পরম একক :  নিউটন (Newton or N).


নিউটন : এক কিলোগ্রাম ভরের কোনো বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে যে বল বস্তুটিতে 1 m/sec² ত্বরণ সৃষ্টি করে, সেই বলকে এক নিউটন বলে।

অর্থাৎ, 1 নিউটন = 1 kg × 1 m/sec².

ভরবেগ ও বল, নিউটন ও ডাইন এদের সম্পর্ক কী?


ভরবেগ ও বলের মধ্যে সম্পর্ক : (1) কোনো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে প্রযুক্ত হয়, ভরবেগের পরিবর্তনও সেই দিকে ঘটে। (2) ভরবেগ ও বল উভয়েই ভেক্টর রাশি।


নিউটন ও ডাইনের মধ্যে সম্পর্ক : 1 নিউটন = 1 kg × 1 m/sec² = 10³ g × 10² cm/sec² 10⁵ ডাইন। অর্থাৎ, 1 নিউটন = 10⁵ ডাইন।


বলের অভিকর্ষীয় একক কি? গ্রাম-ভার ও কিলোগ্রাম-ভার এর সংজ্ঞা দাও। গ্রাম-ভার ও ডাইনের এবং কিলোগ্রাম-ভার ও নিউটনের মধ্যে সম্পর্ক কী?

বলের অভিকর্ষীয় একক : CGS এবং SI পদ্ধতিতে বলের অভিকর্ষীয় একক যথাক্রমে গ্রাম-ভার ও কিলোগ্রাম-ভার।

গ্রাম-ভার সংজ্ঞা : এক গ্রাম ভরের কোনো বস্তুকে পৃথিবী যে বলে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে, সেই বলকে এক গ্রাম-ভার বলে।


গ্রাম-ভার ও ডাইনের সম্পর্ক : 1 গ্রাম-ভার = 1 গ্রাম × 981 সেমি/সেকেন্ড² = 981 ডাইন।

সুতরাং, 1 গ্রাম-ভার = 981 ডাইন।


কিলোগ্রাম-ভার সংজ্ঞা : এক কিলোগ্রাম ভরের কোনো বস্তুকে পৃথিবী যে বলে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে, সেই বলকে এক কিলোগ্রাম-ভার বলে।


কিলোগ্রাম-ভার ও নিউটনের সম্পর্ক : 1 কিলোগ্রাম-ভার = 1 কিলোগ্রাম × 9.81 মিটার/সেকেন্ড² = 9.81 নিউটন।

সুতরাং, 1 কিলোগ্রাম-ভার = 9.81 নিউটন।


বৈদ্যুতিক পাখার সুইচ বন্ধ করার সাথে সাথে থেমে যায় না কেন?


ঘূর্ণায়মান বৈদ্যুতিক পাখাটি গতিজাড্যে থাকে। ঐ অবস্থায় পাখাটিতে বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ করলে গতিজাড্যের দরুণ পাখাটি কিছুক্ষণ ধরে ঘুরতে থাকে। কিন্তু ঘর্ষণজনিত বাধা পাখাটির ঘূর্ণনের বিপরীত দিকে ক্রিয়াশীল থাকায় পাখার ঘূর্ণন ক্রমশ কমতে থাকে এবং অবশেষে পাখাটি স্থিরাবস্থায় পৌঁছায়।

******************


নিউটনের তৃতীয় গতি সূত্র


নিউটনের তৃতীয় সূত্র থেকে কি জানা যায় : এই সূত্র থেকে আমরা ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা পাই। ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া


ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া কাকে বলে? এরা কি একই বস্তুর উপর প্রযুক্ত হয় অথবা এর বৈশিষ্ট্য কি?


ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া : নিউটনের তৃতীয় সূত্রে ‘ক্রিয়া’ এবং ‘প্রতিক্রিয়া’ বলতে দুটি ভিন্ন বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বলকে বোঝানো হয়েছে। এই সূত্র অনুযায়ী যখনই কোনো বস্তু অন্য কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করে তখনই দ্বিতীয় বস্তুটিও প্রথম বস্তুটির ওপর একটি সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে। এক্ষেত্রে প্রথম বস্তু দ্বিতীয় বস্তুর ওপর যে বল প্রয়োগ করে, যদি তাকে ক্রিয়া (action) বলা হয়, তবে দ্বিতীয় বস্তু প্রথম বস্তুর ওপর যে বল প্রয়োগ করে, সেই বলকে প্রতিক্রিয়া (reaction) বলে। এই দুটি বল সব সময় একই সঙ্গে ক্রিয়া করে। ক্রিয়া যতক্ষণ স্থায়ী হয়, প্রতিক্রিয়াও ঠিক ততক্ষণ স্থায়ী হয়। প্রতিক্রিয়ার মান ক্রিয়ার উপরই নির্ভরশীল। ক্রিয়া না থাকলে প্রতিক্রিয়াও থাকে না।


ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বলের বৈশিষ্ট্য : ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া একই সময়ে দুটি ভিন্ন বস্তুর ওপর প্রযুক্ত হয় ; অর্থাৎ, বল দুটির প্রয়োগবিন্দু আলাদা। এজন্য ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া পরস্পর সমান ও বিপরীত হলেও এরা কখনও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। কারণ, সমান ও বিপরীতমুখী দুটি বল একই বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে।


বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়লে বন্দুক পেছনের দিকে ধাক্কা দেয় কেন?


বন্দুক থেকে গুলি ছোঁড়ার সময় নলের মধ্যে গুলির ওপর বল প্রযুক্ত হয়। তার ক্রিয়ায় গুলিটি প্রচণ্ড বেগে সামনের দিকে ছুটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে গুলিটিও বন্দুকের ওপর সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। যার ফলে বন্দুকটি পিছনের দিকে ধাক্কা দেয়।


নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র থেকে জেটপ্লেন এবং রকেটের গতির ব্যাখ্যা করো। | আকাশে রকেট এবং জেট প্লেন কিভাবে উড়ে।


জেট বিমান ও রকেট : জেট বিমান ও মহাকাশযানের রকেটের কার্যনীতি নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্রের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত।


জেট বিমান এর কার্যনীতি কি : জেট বিমানের ইঞ্জিনের মধ্যে জ্বালানি থাকে। যখন বিমানটি চলতে শুরু করে তখন বিমানের সামনের ছিদ্র দিয়ে বায়ু সবেগে জ্বালানির সঙ্গে মিশে উচ্চচাপে দহন কার্য চালায়, ফলে আবদ্ধ আধারে গ্যাস উৎপন্ন হয়। ঐ গ্যাস অতিরিক্ত বায়ুর সঙ্গে মিশে বিমানের পেছনের দিকে একটি সরু নলের মধ্য দিয়ে প্রচণ্ডবেগে বের হতে থাকে। এই গ্যাস প্রবাহকে জেট (jet) বলে। এর ফলে উৎপন্ন প্রতিক্রিয়া বল বিমানটিকে সমানের দিকে গতিশীল করে। তখন বিমানটি তীব্র গতিতে আকাশ পথে এগিয়ে চলে। জেট বিমানে পেট্রোল ও বায়ুর মিশ্রণকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই খুব বেশি উঁচুতে যেখানে বায়ুর ঘনত্ব খুব কম সেখানে জেট ইঞ্জিন কাজ করতে পারে না।


রকেট কিভাবে মহাকাশে যায় : রকেটের কার্যনীতি অনেকটা জেট বিমানের মতো। রকেটের দহন কক্ষে পাম্পের সাহায্যে তরল গ্যাসোলিন ও তরল অক্সিজেনের মিশ্রণকে প্রবেশ করানো হয় এবং যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ঐ জ্বালানিকে জ্বালানো হয়। মিশ্রণটি জ্বললেই অতি উচ্চচাপে গ্যাস উৎপন্ন হয়ে রকেটের নীচের দিকের একটি সরু নলের মধ্য দিয়ে বের হতে থাকে। এর ফলে বিপরীতমুখী যে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয়,। সেই প্রতিক্রিয়া বলই রকেটকে তীব্রবেগে মহাকাশে পৌঁছে দেয়।


জেট বিমানকে আবহমণ্ডল থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করতে হয়। যে কারণে জেট বিমান বায়ুমণ্ডলের ওপরে উঠতে পারে না। কিন্তু রকেটের খোলে জ্বালানি ও তরল অক্সিজেন থাকে। তাই রকেট উৎক্ষেপণের জন্য বায়ুর প্রয়োজন হয় না। এছাড়া বায়ুশূন্য উর্ধ্বাকাশে বায়ুর ঘর্ষণজনিত বাধা না থাকায় রকেট তীব্রবেগে ওপরে উঠে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহকে স্থাপন করতে পারে।


ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীতমুখী হয় কী? উত্তরের সমর্থনে পরীক্ষা দাও।


ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীত : ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া যে সমান ও বিপরীতমুখী, স্প্রিং তুলার সাহায্যে তা দেখানো যায়। দুটি স্প্রিং-তুলা নিয়ে একটির হুকের সঙ্গে অপরটির হুক্ যুক্ত করে বাম ও ডান হাত দিয়ে সমান বলে স্প্রিং-তুলা দুটিকে বিপরীত দিকে টানলে দেখা যাবে স্প্রিং-তুলা দুটির কাঁটা সমান পাঠ নির্দেশ করছে। এবার একটি স্প্রিং-তুলার আংটাকে কোনো দেওয়ালের একটি হুকের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আটকে রেখে অন্য স্প্রিং-তুলাটির অপর প্রান্তের হাতল ধরে টানা হল। দেখা যাবে স্প্রিং তুলা দুটির কাঁটা আগের মতোই সমান পাঠ নির্দেশ করছে। মনে হবে কেউ যেন হাত দিয়ে দেওয়ালে যুক্ত স্প্রিং তুলাটিকে দেওয়ালের দিকে টানছে। অর্থাৎ স্প্রিংয়ের খোলা প্রান্তে প্রযুক্ত বল (বা ক্রিয়া) এর ফলে দেওয়ালে যুক্ত স্প্রিং তুলাটিতে সমান প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং, পরীক্ষাটি থেকে প্রমাণিত হয়—ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া পরস্পর সমান ও বিপরীতমুখী।


থেমে থাকা বাস হঠাৎ চলতে শুরু করলে যাত্রীরা পিছনের দিকে হেলে পড়ে কেন?


কোনো বাস স্থির অবস্থা থেকে হঠাৎ চলতে শুরু করলে বাসের মধ্যে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা পিছনের দিকে হেলে পড়ে। কারণ, বাসটি যখন স্থির থাকে যাত্রীর দেহও তখন স্থির থাকে। এবার বাসটি হঠাৎ চলতে শুরু করলে যাত্রীর পা দুটো গাড়ির সংলগ্ন থাকায় গাড়ির সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু তাঁর দেহের ওপরের অংশ স্থিতি জাড্যের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চায়। ফলে যাত্রীরা পিছনের দিকে হেলে পড়ে।


চলন্ত গাড়ি হঠাৎ থেমে গেলে গাড়ির যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে কেন?


চলন্ত গাড়ি হঠাৎ থেমে গেলে গাড়ির ভেতরের যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কারণ, গাড়িটি যখন গতিশীল অবস্থায় থাকে, তখন গাড়িটির যাত্রীর দেহের সমস্ত অংশই গাড়ির সঙ্গে সমবেগে থাকে। এবার গাড়িটি হঠাৎ থেমে গেলে যাত্রীর পা দুটো গাড়ির সংলগ্ন বলে হঠাৎ স্থির হয়ে যায়, কিন্তু দেহের ওপরের অংশ গতিজ্যাড্যের দরুন সামনের দিকে কিছুটা এগিয়ে যায়। ফলে যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।