বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩

ঘড়ির কাঁটা ডান দিকে ঘোরে কেন?

ঘড়ির কাঁটা ডান দিকে ঘোরে কেন?


ঘড়ির কাঁটা কেন ডান দিকে ঘোরে। কারণ, ঘড়ি আবিষ্কার হয়েছিল ইংল্যান্ড বা ইউরোপের কোনো দেশে। এর আগে ছিল সূর্যঘড়ি। ইংল্যান্ড পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে হওয়ায় সূর্য দক্ষিণ আকাশে হেলে থাকে। এ কারণে সূর্যঘড়ির যে দণ্ডের ছায়া দেখে সময় পরিমাপ করা হয়, সেই ছায়াটি বাঁ দিক থেকে ডান দিকে ঘোরে। কারণ, ওই স্থানটি উত্তর গোলার্ধে। ওখানে সূর্য যখন পূব থেকে পশ্চিমে যায়, তখন সূর্যঘড়ির দণ্ডের ছায়াটি বাঁ থেকে ডান দিকে ঘোরে। তাই ঘড়ি আবিষ্কারের সময় স্বাভাবিক ও অভিজ্ঞতালব্ধ চিন্তা অনুযায়ী ঘড়ির কাঁটা ডান দিকে ঘোরানোর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।





মানব সভ্যতায় ঘড়ি একটি যুগান্তকারি আবিস্কার। পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় ঘড়ির ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু আজ আমরা যে ঘড়ি ব্যবহার করছি তার ইতিহাস অনেক পুরনো । পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ঘড়ি, মানে সবচেয়ে পুরোনো সূর্যঘড়ির মর্যাদা পায় মিশরীয়দের ওবেলিস্ক।


ধারণা করা হয়, মিশরীয়রা এই ঘড়ি বানানো শিখেছিল খ্রিস্টের জন্মেরও সাড়ে ৩ হাজার বছর আগে। এরকম আরেকটা ঘড়িকে বলা হয় ‘শ্যাডো ক্লক’। ‘শ্যাডো ক্লক’ টা বানিয়েছিল ব্যবিলনীয়রা, খ্রিস্টের জন্মের প্রায় দেড় হাজার বছর আগে।


এই সূর্যঘড়িগুলোতে সময় দেখা হতো সূর্যের ছায়া দেখে। অর্থাৎ সময় নির্দেশক যে কাঁটা বা দণ্ড, সেটা স্থির থাকতো আর সূর্যের ছায়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরে যেতো। আর আমাদের ঘড়িতে আবার উল্টো; এই কাঁটাগুলোই ঘুরে ঘুরে সময় জানান দেয়। ছায়া দেখার কোনো বালাই-ই নেই। এরকম ঘড়ি, মানে যে ঘড়িতে কাঁটা ঘুরে ঘুরে সময় জানান দেয়, সেরকম ঘড়ি প্রথম বানানো হয় ১৩ শতকে। তবে তখনই এই ঘড়িগুলো তেমন জনপ্রিয় হয়নি। হবে কী করে বলো, তখনো যে মানুষের সময় দেখার তেমন প্রয়োজনই হয়নি। সূর্য দেখেই মানুষ বুঝতো- এখন সকাল না দুপুর, বিকাল না সন্ধ্যা। তখন এরচেয়ে বেশি সময় দেখার তেমন দরকার হতো না।



এর মোটামুটি ৪০০ বছর পরে, ১৮ শতকে যখন কল-কারখানা বসতে শুরু করলো, তখন মানুষের সময় দেখার দরকার হতে শুরু করলো। নির্দিষ্ট সময়ে কারখানায় যেতে হবে, নির্দিষ্ট সময় দুপুরের খাবার খেয়ে আবার কাজে লাগতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ে ছুটি হবে। তা না হলে যে কারখানাই চলবে না! কারখানায় যদি একজন সকাল সাতটায়, একজন সকাল আটটায়, আরেকজন সকাল নয়টায় আসে, মানে যেমন ইচ্ছে তেমন আসতে থাকে, তাহলে কী করে হবে বলো? তখন সবার ওই কাঁটাওয়ালা ঘড়ির দরকার পড়লো; যেন সবাই সময় মতো সব কাজ করতে পারে। এবার কিন্তু ঘড়ি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠলো।



এবার একটা হিসেব মেলানো যাক। যে অঞ্চলে পুরোনো ঘড়িগুলো তৈরি হয়েছিল, মিশর আর ব্যবিলন- এগুলো কিন্তু একই অঞ্চলে। আর এই অঞ্চলের অবস্থানের কারণে সূর্যঘড়ির ছায়া দিনের সাথে ক্রমাগত পশ্চিম থেকে উত্তর হয়ে পূর্বদিকে সরে যেত। অর্থাৎ, দিন যতো গড়িয়ে রাতের দিকে যেত, ছায়াও ততো পশ্চিম দিক থেকে উত্তর দিক হয়ে পূর্ব দিকে যেত। সেখান থেকেই ঘড়ির কাঁটার দিকের ব্যাপারটা এসেছে। সেই অনুযায়ী-ই ঘড়ির কাঁটা পশ্চিম থেকে উত্তর ছুঁয়ে পূর্ব দিকে যায়।



ভাবছেন, পশ্চিম-উত্তর-পূর্বের সাথে আবার বাম- ডানের কী সম্পর্ক? আচ্ছা, তাহলে একটা মানচিত্র নিয়ে বসেন। দেখেন তো, মানচিত্রের উপরের দিকে দিক নির্দেশক একটা চিহ্ন আছে কিনা? পেয়েছেন? এবার দেখুন তো, উপরের দিকের চিহ্নের পাশে কোন দিকের কথা লেখা? আর কিছু লেখা না থাকলেও ইংরেজি বর্ণের ‘এন’ লেখা আছে, তাই না? এই ‘এন’র হলো নর্থ বুঝাতে লেখা হয়। বাংলায় যাকে বলে উত্তর ।



আর মানচিত্রের নিচের দিকটা হল দক্ষিণ। এবার দেখো তো, বাম দিকে আর ডান দিকে কী পরে? হ্যাঁ, বাম দিকে পশ্চিম, আর ডান দিকে পূর্ব। এবার বুঝলেন তো, ঘড়ির কাঁটা কেন বাম থেকে সবসময় ডান দিকে যাচ্ছে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন