চ্যালেঞ্জারের অসমাপ্ত মিশন
এক মহাজাগতিক দুর্ঘটনার উপাখ্যান!
বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের কথা। নাসার স্পেস শাটল প্রোগ্রাম জনসাধারণের জন্য তখন মামুলি ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। জনসাধারণ শাটল নিয়ে আগ্রহ অনেকখানি কমে গিয়েছিল। কিন্তু আমেরিকান কংগ্রেসের কাছে শাটল টিকিয়ে রাখার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট পেতে জনগণের সমর্থন খুবই দরকার ছিল।
তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপের। নাসা প্রথমবারের মতো স্পেস স্টেশানে কিছু বাচ্চাদের পড়ালেখা করানো হবে বলে ঠিক করে। এবং সেটা সারা পৃথিবীতে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এটা সাময়িক সময়ের জন্য হলেও নাসা একটা বার্তা দিতে চেয়েছিল যে মহাকাশ সবার জন্য। এর নাম দেওয়া হয় এসটিএস-৫১- এল মিশন।
এই প্রোগ্রামের জন্য একজন শিক্ষক দরকার ছিল। তাই মহাকাশে যাবার জন্য ১০০০০ জন শিক্ষক আবেদন করেন। এদের মধ্যে বাছাইক্রিয়া শেষে ক্রিস্টা নামের একজন শিক্ষিকা নির্বাচিত হন। তিনি স্পেসে নেওয়ার জন্য সকল প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন।
স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার ওই শিক্ষিকাসহ ৭জনকে স্পেসে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। কিন্তু লঞ্চিংয়ের আগের দিন ফ্লোরিডার তাপমাত্রা মাইনাস ৬ ডিগ্রীতে নেমে আসে। এতে স্পেস শাটলটি পরের দিন ঠিকমতো উড়তে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা যায়। আশঙ্কা দেখা যায় যে স্পেস শাটলটির সলিড রকেট বুস্টার অনেক তাড়াতাড়ি জ্বালানী পুড়িয়ে একটা বোমায় পরিণত হবে। নাসার সব এঞ্জিনিয়াররা শাটলটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাই পরদিনই শাটলটিকে ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
লঞ্চিং প্যাডের কাছে সেদিন উপস্থিত হয়েছিল প্রচুর জনগণ। ক্রিস্টার পরিবারসহ তার শিক্ষার্থীরাও সেদিন ওখানে ছিল। সবাই অপেক্ষা করছিল ঐতিহাসিক একটা দিনের।
১৯৮৬ সালের ২৮ই জানুয়ারিতে নির্দিষ্ট সময়ে চ্যালেঞ্জারের ২৫ তম উড্ডয়ন শুরু হয়। ফ্লোরিডা থেকে ২ কি.মি উচ্চতায় ওঠার পর বোঝা যায় যে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। উড্ডয়নের ৭৩ সেকেন্ড পর কিছু ঠিকমতো বুঝে ওঠার আগেই বুম!!!! সবার চোখের সামনে শাটলটি বিরাট একটা বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। সবাই হতবাক চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল এবং হয়তোবা ভাবছিল, " এটা কি হলো?" মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে গিয়ে মহাকাশ বীর হয়ে তাদের নিহত হতে হলো।
এই ঘটনার পর নাসার যথেষ্ট উদ্দিগ্ন হবার কারণ ছিল। স্পেস শাটলের আর কোনোদিন উড্ডয়ন হবে কিনা তাইই ছিল অনিশ্চিত। কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে স্পেস শাটল আরো অনেকদিন অনেক মিশন সম্পন্ন করেছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিল যে নভোচারীরা কতোটা ঝুঁকি নিয়ে মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে অটল থাকেন।
বিস্ফোরণের মর্মান্তিক সেই ভিডিওটি দেখুন এখানেঃ https://www.youtube.com/watch?v=fSTrmJtHLFU&feature=share